ইলেকট্রনিক প্রকৌশলবিদ্যা

পরিচিতি:

'ইলেকট্রনিক্স' তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার একটি শাখা যেখানে ভ্যাকুয়াম টিউব ও অর্ধপরিবাহী পদার্থের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট কার্য সমাধার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাত ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে বিভিন্ন একটিভ কম্পোনেন্ট যেমন ট্রানজিস্টর, ভ্যাকুয়াম টিউব, ডায়োড এবং বিভিন্ন প্যাসিভ কম্পোনেন্ট যেমন রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর ইত্যাদির নানারকম বৈদ্যূতিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে ডিভাইসসমূহের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহের আচরণ, তড়িৎ সংকেতের পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ের কৌশলগত দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

Oxford Dictionary এর সজ্ঞানুযায়ী –

Electronics is the branch of physics and technology concerned with the design of circuits using transistors and microchips, and with the behavior and movement of electrons.

ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ক্ষুদ্রাকৃতির তড়িৎ সংকেতের ব্যবহারিক ক্ষেত্র যেমন রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, রাডার, সেলুলার ফোন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।

ইলেকট্রনিক বর্তনীর নকশা প্রণয়ন, পরীক্ষণ, পরিচর্যা, সংকেত প্রকৃয়াকরণ, সিস্টেম ডিজাইন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক প্রকৌশলীদের প্রধান কাজ।

সূচনাকাল ও ক্রমবিকাশ:

ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের চর্চা ঠিক কোন সময় হতে শুরু হয়েছে তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ গবেষক বায়ুশূণ্য নলের উদ্ভাবন ও ব্যবহারকে ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের গবেষণাগত সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। ১৮৫০ সালের কাছাকাছি সময়ে একজন জার্মান গবেষক Geissler এ ধরণের কিছু পরীক্ষণ করার সময় লক্ষ করেন যে, যদি কোন বায়ুশূণ্য নলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ ঘটানো হয় তবে সেখান হতে শিখা বিহীন আলোক স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে আসে। ১৮৭৮ সালের দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ক্রুকস লক্ষ করেন যে, বায়ুশূণ্য নলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ মূলতঃ কিছু কণার সমষ্টি। এর পরবর্তী সময়ে একজন ফরাসী পদার্থবিদ Perrin পেরিন ব্যাখ্যা করেন যে, বায়ুশূন্য নলের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত তড়িৎ মূলতঃ ঋণাত্বক চার্জ বিশিষ্ট কণাসমষ্টির প্রবাহ। তার এই গবেষণার সূত্র ধরে ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্যার জে জে থমসন ক্যাথড রশ্নির উপর গবেষনা করে এই কণার বৈশিষ্ট্য সমূহ আবিস্কার করেন। সঙ্গত কারনেই ১৮৯৭ সালে ইলেকট্রনের অস্তিত্ত্ব আবিস্কার হয়। ইলেকট্রনের অস্তিত্ত্ব ও এর বৈশিষ্টসমূহ আবিস্কার ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের পরবর্তী উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত করে। এর ফলে পরবর্তী যুগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের গঠন ও নকশা প্রনয়নের কাজ সহজ থেকে সহজতর হয়েছে।

১৯০৪ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্যার এমব্রোস ফ্লেমিং (Sir Ambrose Fleming) একটি বিশেষ ধরণের ভ্যাকুয়াম টিউব আবিষ্কার করেন। ফ্লেমিং এর টিউবটি ছিল মূলতঃ একটি ভ্যাকুয়াম টিউব ডায়োড যা দিক পরিবর্তি প্রবাহকে একমূখী প্রবাহে রূপান্তর করতে পারত, এবং এটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ডিটেকশনে রেডিও রিসিভারে ব্যবহৃত হতো। ১৯০৬ সালে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী লী-ডি-ফরেষ্ট (Lee de Forest) বিশেষ ধরণের টিউব আবিষ্কার করেন যা ছিল মূলতঃ ভ্যাকুয়াম টিউব ট্রায়োড এবং ইহা তড়িৎ সংকেতকে বিবর্ধন করতে পারত। ফরেষ্টের এই টিউবটি অডিওন (Audion) নামে পরিচিত, এবং পরবর্তিতে এটি টেলিফোনি প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯২০ সালে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী আলবার্ট হাল (Albert Hull) ম্যাগনিট্রন আবিষ্কার করেন যা উচ্চ শক্তির মাইক্রোওয়েভ সৃষ্টি করতে পারত। পরবর্তিতে ম্যাগনিট্রন ব্যবহার করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রাডার (RADAR) সিস্টেমের ব্যপক উন্নয়ন করে এবং যুক্তরাজ্যের Bawdsey গ্রামে সর্ব প্রথম ব্যবহারিক রাডার কেন্দ্র স্থাপন হয়। ১৯২২ সালে টেলিভিশনে ব্যবহার উপযোগী ক্যাথড-রে টিউব উদ্ভাবন হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিক টেলিভিশন বাজারে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক-কালে ১৯৩৭ সালে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী Russel and Sigurd Varian ক্লাইসট্রন Clystron টিউব উদ্ভাবন করেন, যা রাডার সিস্টেমের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। এভাবে টিউবের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের অনেকগুলি অভিনব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সম্ভব হলেও তা আধুনিক ডিভাইসের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে খুব বেশী সহায়ক ছিলনা, কেননা টিউবগুলির বেশকিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যেমন – এগুলি আকারে বড়, ধীর গতির সুইচিং প্রকৃয়া, উচ্চ তাপোৎপাদী এবং অধিক পাওয়ার অপচয়কারী। এই সকল সীমাবদ্ধতার কারণে তৎকালীন ইলেকট্রনিক বর্তনীর আকার ছিল আকারে বড় এবং বেশী তাপোৎপাদী হবার কারণে তা বেশী বিদ্যূৎ খরচ করতো। এসব অসুবিধা দুর করতে তৎকালীন তড়িৎ প্রকৌশলীগণ এমন কিছু খুঁজছিলেন যা হবে এই সকল সীমাবদ্ধতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। এই ধারণার বাস্তব রূপ দিতেই পরবর্তী যুগে (Solid State Device) কঠিন অবস্থা ডিভাইসের সূচনা হয়।

১৯৪৭ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরীর তিন গবেষক (William Bradford Shockley, John Bardeen and Walter Brattain) উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড শকলি, স্যার জন বার্ডিন এবং ওয়ালটার ব্রাটেইন যৌথভাবে সর্বপ্রথম সেমিকন্ডাকটর নির্মিত ট্রানজিস্টর আবিস্কার করেন। ট্রানজিস্টর আবিস্কারের মাধ্যমে সলিড স্টেট যুগের সূচনা হয়। এবং সলিড স্টেট ডিভাইসের ব্যপক উন্নয়ন হতে থাকে ফলে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসমূহ আকার ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে। ট্রানজিস্টরসমূহ আকারে ছোট, কম তাপোৎপাদী, দ্রুতগতির সুইচিং ক্ষমতা সম্পন্ন এবং কম পাওয়ার অপচয়কারী হবার কারণে তা দ্রুত টিউবকে অপসারন করে নিজের যায়গা দখল করে নেয় এবং ব্যপকভাবে তড়িৎ বর্তনীতে ব্যবহার হতে থাকে। ফলে বর্তনী সমূহের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল রেডিও প্রকৌশল বা বেতার প্রকৌশল নামে পরিচিত ছিল। তখন এর কাজের পরিধি রাডার, বাণিজ্যিক বেতার (Radio) এবং আদি টেলিভিশনে সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর চাহিদুনুযায়ী যন্ত্রপাতির উন্নয়ন শুরু হল, তখন থেকে প্রকৌশলের এই শাখা দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং আধুনিক টেলিভিশন, অডিও ব্যবস্থা, কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসর এই শাখার অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে বেতার প্রকৌশল নামটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে দশকের শেষ নাগাদ ইলেকট্রনিক্স নাম ধারণ করে।

১৯৫৯ সালে Robert Norton Noyce এই ধারণা দেন যে, একই সিলিকন খন্ডের উপর বহু সংখ্যক ডিভাইস নির্মান এবং তাদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি সম্ভব, এর ফলে ডিভাইসের গড় আকার, ওজন ও উৎপাদন ব্যয় কমবে। মনোলিথিক প্রকৃয়ায় তৈরীকৃত এই সকল বর্তনীসমূহকে একীভূত বর্তনী বা Integrated Circuit বলে। ১৯৬১ সাল হতে ফেয়ারচাইল্ড Fairchild এবং টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট Texas Instruments বাণিজ্যিকভাবে IC উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হয়ে একীভূত বর্তনীতে ডিভাইসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৬১ সালে (SSI), ১৯৬৬ সালে (MSI), ১৯৭০ সালে (LSI) এবং ১৯৮০ সালে (VLSI) ইন্টিগ্রেশন গৃহীত হয়। ফলে আজকের দিনে উৎপাদিত একটি VLSI একক চীপে প্রায় এক মিলিয়নের অধিক ডিভাইস একীভূত করা সম্ভব। সমন্বিত বর্তনী প্রযুক্তির উন্নয়ন ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের উন্নয়নের গতিকে আরো তরান্বিত করেছে। কমিউনিকেশন ও কম্পিউটার শিল্পের উন্নত হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি IC টেকনোলজির উন্নয়নের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

IC টেকনোলজির সুবাদে ১৯৭১ সালে ইন্টেল কর্পোরেশন সর্ব প্রথম ৪ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল – ৪০০৪ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে এর ফলে ব্যক্তিগত কম্পিউটার উদ্ভাবনের পথ সুগম হয়। ১৯৭৩ সালে ইন্টেল কর্পোরেশন ৮ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল – ৮০৮০ উদ্ভাবন করে যার মাধ্যমে প্রথম ব্যাক্তিগত কম্পিউটার Altair 8800 তৈরী সম্ভব হয়। এর পর থেকে মাইক্রোইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির উন্নয়ন নিয়ে গবেষকগণ ব্যস্ত আছেন। প্রতিদিন আসছে নতুন নতুন ডিভাইসের পেটেন্ট। একারণে ইলেকট্রনিক টেকনোলজি বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল টেকনোলজীর অন্যতম। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক টেকনোলজির নব নব উদ্ভাবন মানব সভ্যতার কল্যাণে ব্যবহার হোক, মানুষের জীবনকে করুক আরো সহজ থেকে সহজতর।

ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের প্রয়োগক্ষেত্র:

আজকের দিনে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্ষেত্র ব্যপক বিস্তৃত। আমাদের প্রত্যহিক জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ডিভিডি প্লেয়ার, রেডিও রিসিভার ইত্যাদি। সহজে বুঝার জন্য বিষয়টিকে আমরা কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নিই।

  1. যোগাযোগ এবং বিনোদনমূলক প্রয়োগ ক্ষেত্র
  2. ইন্সট্রুমেন্টেশন এবং কন্ট্রোল ভিত্তিক প্রয়োগ ক্ষেত্র
  3. প্রতিরক্ষা কাজে প্রয়োগ
  4. চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রয়োগ

যোগাযোগ এবং বিনোদনমূলক প্রয়োগ ক্ষেত্র:

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি শুধুমাত্র টেলিফোনি ও টেলিগ্রাফিতে ব্যবহার হতো যা বর্তমান যুগে উন্নত হয়ে কর্ডলেস টেলিফোনি ও মোবাইল ফোনে উন্নীত হয়েছে যাতে কল ও বার্তা রেকর্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সকল আধুনিক টেলিফোনী সেট গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে কল ও বার্তা রেকর্ড করে রাখতে পারে। ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে এক দেশ হতে অন্য দেশে বৈঠক করা যায়। আধুনিক ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে গ্রাউন্ড ষ্টেশনে বসে এয়ার ক্রাফট ও মহাকাশ যানে বার্তা ও নির্দেশনা পাঠানো যায়। বর্তমান যুগে টেলিভিশন বিনোদনের অনন্য মাধ্যম এছাড়া ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা, রেকর্ড প্লেয়ার ইত্যাদি মানুষের জীবনে যোগ করেছে ডিজিটাল বিনোদন।

যোগাযোগ এবং বিনোদনমূলক প্রয়োগ ক্ষেত্র:

আধুনিক যুগের সকল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ইলেকট্রনিক্সের প্রয়োগ রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিসমূহের পণ্য উৎপাদন মেশিনসমূহকে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূক্ষ ভাবে কন্ট্রোল করা হয় এছাড়া পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য অটোমেশন সিস্টেম উৎপাদনের মান উন্নত করে।

প্রতিরক্ষা কাজে প্রয়োগ:

আধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির আবিস্কার রাডার সিস্টেমের সাহায্যে শত্রুপক্ষের ফাইটার বিমানের অবস্থান, গতিবেগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। আধুনিক মিশাইল, এন্টি এয়ার ক্রাফট গান ইত্যাদি ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে এতটাই সূক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায় যে শত্রুপক্ষের বিমান লক্ষে পৌছাবার পূর্বেই তাকে ধ্বংস করা যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রয়োগ:

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়। ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফী, এক্স-রে, গামা ক্যামেরা, সিটি স্ক্যানার, এমআরআই ইত্যাদি আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে দ্রুত ও কার্যকরী ভাবে জটিল রোগ নির্নয় করা যায়।

সূত্র:

  1. A Text Book of Applied Electronics – R. S. Sedha
  2. Wikipedia

পোস্টটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে।

---------

২টি মন্তব্য: