রেজিস্টর

ভূমিকা:

ইলেকট্রনিক সার্কিটে বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস রেজিস্টর। রেজিস্টরের মত অন্য কোন ডিভাইস এত বেশী ব্যবহার হয়না। রেজিস্টর চেনেনা এমন কোন ইলেকট্রনিক প্রেমী হবিস্ট হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু এই চেনা জানার মধ্যে রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতা, রয়েছে কিছু ত্রুটি বিচ্যূতি। তাই প্রায়ই দেখা যায় কোন প্রজেক্ট শুরু করে অর্ধেক সম্পন্ন না হতেই ব্যর্থ হয়ে প্রজেক্ট বাদ দেন অনেক শিক্ষার্থী এবং হবিস্ট। ইলেকট্রনিক হবিস্টদের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট এবং ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক, নতুবা তারা সঠিকভাবে প্রজেক্ট তৈরী করতে সক্ষম হবে না। আমি ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পর্কে পোস্ট দেবার ইচ্ছা পোষণ করি যাতে তরুন উদীয়মান মেধাবী হবিস্টরা সাহায্য পেতে পারে এবং তাদের জ্ঞানের পরিধি আরো প্রসস্ত হতে পারে। আজ এই পোস্টে রেজিস্টর সম্পর্কে আমার জ্ঞানের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনার নিমিত্ত বিষয়টির সাথে সংগতিপূর্ণ সর্বাধিক তথ্য উপস্থাপনে সচেস্ট হব যাতে তরুন হবিস্টরা একটি পোষ্ট পড়েই তাদের সম্ভাব্য সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়, এতে করে পোষ্টটি বড় হবে কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। এত প্রচেষ্টা ও আয়োজন সত্ত্বেও বর্ণ ও শব্দের উপস্থাপনায় থাকবে কিছু ত্রুটি, কিছু অপূর্ণতা, কিছু অপ্রাপ্তি, তার পরও বিষয়গুলি নজরে আনলে ভবিষ্যতের পোস্টগুলি করা যাবে আরো বেশী সমৃদ্ধ ও নির্ভূল।

রেজিস্টর ও রেজিস্ট্যান্স কী?

রেজিস্টর হলো ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস বা সার্কিট ইলিমেন্ট যা এর সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যূৎ প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। রেজিস্টরের বৈশিষ্ট্যকে রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। অর্থাত রেজিস্টর হলো ডিভাইসের নাম এবং রেজিস্ট্যান্স হলো ঐ ডিভাইসের গুণ বা বৈশিষ্ট।

উদাহরণ দিয়ে বলি, রাস্তায় গাড়ীর গতিকে বাধা দিতে চাইলে আমরা সেখানে স্পীড ব্রেকার স্থাপন করি যা গাড়ীর গতিকে বাধা দেয় এবং স্পীড ব্রেকার ব্যবহার করলে গাড়ীর গতি কমে যায়। তাহলে স্পীড ব্রেকার হল ডিভাইস এবং গাড়ীর গতিকে বাধাগ্রস্থ করা হল এর গুণ। রেজিস্টরের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যপার, রেজিস্টর হলো ডিভাইস এবং বিদ্যূৎ প্রবাহকে বাধা দেয়া এর বৈশিষ্ট বা গুণ।

প্রতীক:

বৈদ্যূতিক স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রামগুলিতে রেজিস্টরকে প্রকাশ করার জন্য নিম্নের প্রতীকগুলি ব্যবহার করা হয়:

প্রতীক অর্থ
স্থির মানের রেজিস্টর
পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর
পটেনশিওমিটার
আলোক সংবেদনশীল রেজিস্টর
তাপ সংবেদনশীল রেজিস্টর

পরিমাপের একক:

রেজিস্ট্যান্সের একক ওহম (Ohm) যাকে গ্রীক অক্ষর Ω দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যে পরিমান রেজিস্ট্যান্সের কারণে কোন রেজিস্টরের আড়াআড়িতে ১ ভোল্ট বিভব পার্থক্যে উক্ত রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে ১ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাকে ১ Ω ওহম বলে।

রেজিস্টরের কিছু বৈদ্যূতিক বৈশিষ্ট:

  1. রেজিস্টর একটি দুই টার্মিনাল বিশিষ্ট ডিভাইস
  2. ইহা নন-পোলার ডিভাইস
  3. ইহা লিনিয়ার ডিভাইস
  4. ইহা প্যাসিভ ডিভাইস

এখন প্রশ্ন হলো কেন রেজিস্টরকে দুই টার্মিনাল, নন-পোলার, লিনিয়ার এবং প্যাসিভ বলা হলো? আসুন জানার চেষ্টা করি।

সাধারণতঃ রেজিস্টরের রেজিস্ট্যান্স দুই টার্মিনালের মধ্যে ক্রিয়া করে এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর দুটি টার্মিনাল থাকে বলে একে দুই টার্মিনাল ডিভাইস বলে। তবে কিছু পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর আছে যাদের তিনটি টার্মিনাল রয়েছে, যেমন পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট। কোন সার্কিটের দুটি অংশের মাঝে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্ট্যান্স প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিংবা ভোল্টেজ ডিভাইডার হিসাবে এগুলি ব্যবহার হয়। এগুলির কার্যকরী উপাদান রেজিস্টর হলেও এগুলিকে সরাসরি রেজিস্টর নামে অভিহিত করা হয়না বরং বালা হয় পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট।

নন-পোলার বলতে বুঝায় যার কোন পোলারিটি বা ধণাত্বক-ঋণাত্বক প্রান্ত নেই। অনুরূপ রেজিস্টরের কোন পোলারিটি নেই। একে যে কোন ভাবে সার্কিটে সংযুক্ত করা যায় অর্থাৎ রেজিস্টরকে সার্কিটে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পোলারিটি বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়না।

লিনিয়ার ডিভাইস বলতে এমন ডিভাইস বুঝায় যার (Across) আড়াআড়িতে প্রযুক্ত ভোল্টেজ এবং উক্ত ভোল্টেজ সাপেক্ষে প্রবাহিত কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক সর্বদা সরল রৈখিক হয়।

যেমনঃ ২ ওহম রেজিস্ট্যান্স বিশিষ্ট কোন রেজিস্টরের আড়াআড়িতে ২, ৪, ৬ এবং ৮ ভোল্ট প্রয়োগ করলে এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমান যথাক্রমে ১, ২, ৩ এবং ৪ এম্পিয়ার হবে। এখন এই ডাটাগুলি ছক কাগজে স্থাপন করে বিন্দুগুলি সংযোগ করলে আমরা একটি সরল রেখা পাব যা ঐ ডিভাইসের জন্য ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে এবং এই সম্পর্ক সকল মানের রেজিস্টর এবং সকল ভোল্টেজ মানের জন্য সর্বদা সরল রৈখিক হয়। একারণে রেজিস্টরকে লিনিয়ার ডিভাইস বলা হয়।

একটিভ ডিভাইস বলতে বুঝায় সেই সকল ডিভাইস যাকে ক্রিয়াশীল করতে বাহ্যিক পাওয়ার সের্সের প্রয়োজন হয় এবং ইহা সিগনালের গেইন সৃষ্টিতে সক্ষম। পক্ষান্তরে প্যাসিভ ডিভাইসগুলি কোন শাক্তি উৎসের উপর নির্ভশীল নয় এবং কোন সার্কিটে পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে না। এই ধরনের ডিভাইসগুলি সিগনালের পাওয়ার গেইন সৃষ্টিতেও অক্ষম হয়। রেজিস্টর পাওয়ার গেইন সৃষ্টিতে অক্ষম। ইহা একটি প্যসিভ ইলিমেন্ট।

প্রকারভেদ:

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে রেজিস্টরের শ্রেনীবিভাগ করা যায়। তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

রেজিস্ট্যান্সের ধরণের উপর ভিত্তি করে রেজিস্টর দুই ধরণের হয়ে থাকে:

  1. স্থির মানের রেজিস্টর
  2. পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর (পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট)

রেজিস্টিভ উপাদানের (যে উপাদানে রেজিস্টর তৈরী হয়) উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ে থাকে:

  1. কার্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
  2. ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর (স্থির ও পরিবর্তনশীল উভয় মানের হয়)
  3. ফিল্ম-টাইপ রেজিস্টর (স্থির ও পরিবর্তনশীল উভয় মানের হয়)
  4. সারফেস মাউন্ট রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
  5. ফিউজ্যাবল রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
  6. আলোক সংবেদনশীল রেজিস্টর (সর্বদা পরিবর্তনশীল মানের হয়)
  7. তাপ সংবেদনশীল রেজিস্টর (সর্বদা পরিবর্তনশীল মানের হয়)

গঠন:

১। কার্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর:

ইহা কার্বন রেজিস্টর নামেই অধিক পরিচিত। ইলেকট্রনিক সার্কিটে এই ধরণের রেজিস্টর সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়। এই ধরণের রেজিস্টরের কার্যকরী রেজিস্টিভ উপাদান হলো কার্বন বা গ্রাফাইট। গ্রাফাইটের গুড়ার সাথে অন্য একটি ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল যেমন সিরামিকের গুড়া মিশিয়ে কম্পেজিশন তৈরী করা হয়। উক্ত কম্পোজিশন পদার্থ দ্বারা একটি সলিড সিলিন্ড্রিক্যাল রড তৈরী করে এই রডের দুই প্রান্ত হতে ধাতব ক্যাপ সংযুক্ত করে টার্মিনাল বের করা হয়। এবং কার্বন কম্পোজিশন রডটি একটি প্লাস্টিক কভার বা কোটিং দ্বারা আবৃত করে এর উপরে বিভিন্ন রঙের কোড দেয়া হয়। বিভিন্ন রঙের কোডগুলির বিশেষ সংখ্যাবাচক মান রয়েছে যা সম্মিলিতভাবে রেজিস্টরের মানকে প্রকাশ করে। কার্বন রেজিস্টর সাধারণতঃ ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে থাকে বিধায় এর গায়ে রেজিস্ট্যান্সের মান লিখে প্রকাশ করা সম্ভব হয়না, এজন্য কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।

রেজিস্টরের মান নির্ভর করে কার্বন এবং ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের অনুপাতের উপর। যদি ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের পরিমান বেশী এবং কার্বনের পরিমান কম হয় তাহলে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয় আর ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের পরিমান কম এবং কার্বনের পরিমান বেশী হলে নিম্ন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়।

কার্বন রেজিস্টরের মান সাধারণতঃ ০.৪৭ ওহম হতে ২০ মেগা ওহম পর্যন্ত বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড মানে হয়ে থাকে। এর পাওয়ার রেটিং ১/১০, ১/৮, ১/৪, ১/২, ১ এবং ২ ওয়াট স্ট্যান্ডার্ড মানে পাওয়া যায়। এই রেজিস্টর আকারে ছোট দামে খুব সস্তা এবং ইলেকট্রনিক সার্কিটে সর্বাধিক ব্যবহৃত রেজিস্টর।

২। ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর:

এই ধরণের রেজিস্টরে কার্যকরী উপাদান হিসাবে সাধারণতঃ নাইক্রোম, টাংস্টেন এবং ম্যাংগানিন ধাতব তার ব্যবহার করা হয়। এই ধাতব তারগুলির দৈর্ঘ্য এবং আপেক্ষিক রোধের উপর ভিত্তি করে উক্ত রেজিস্টরের মান নির্ধারণ হয়। তার গুলিকে সিরামিক কিংবা সিমেন্ট নির্মিত সিলিন্ডারের উপর প্যাঁচানো হয় এবং তারের দুই প্রান্তে টার্মিনাল সংযুক্ত করা হয়। এরপর তার প্যাঁচানো সিলিন্ডারটি ইনসুলেটিং কোটিং দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়, কখনো কখনো তার সহ সিলিন্ডারটি সিরামিক নির্মিত কেসের মধ্যে স্থাপন করা হয়। নিচের চিত্রে একটি স্থির মানের ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর দেখানো হয়েছে। এর গায়ে এর মান লেখা দেখা যাচ্ছে ০.৩৩ ওহম এবং পাওয়ার রেটিং ৫ ওয়াট। এটি কার্যকর অবস্থায় বেশ গরম হয়ে থাকে।

ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর যদি পরিবর্তনশীল মানের হয় তবে তাকে রিহোস্ট্যাট বা পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। নিম্নে একটি রিহোস্ট্যাটের ছবি দেয়া হলো। এর গঠন অন্যান্য ওয়্যার উন্ড রেজিস্টরের মতই তবে পার্থক্য হলো এর তিনটি টার্মিনাল থাকে যাকে ১, ২ এবং ৩ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর ৩নং কানেকটরের সাথে অতিরিক্ত একটি স্লাইডার কানেকটর যুক্ত থাকে যা রেজিস্ট্যান্স ওয়্যারের উপর দিয়ে ঘর্ষণের মাধ্যমে চলাচল করতে পারে। ১ এবং ২ নং টার্মিনালের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থির মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় এবং ৩ নং এর সাথে ১ ও ২ নং টার্মিনালগুলির মাঝে পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। এর গায়ে রেজিস্ট্যান্সে মান এবং কত এম্পিয়ারে একে ব্যবহার করা যাবে তা লিখা থাকে।

রিহোস্ট্যাটকে কোন সার্কিটে এডজাস্টেবল ভেরিয়েবল রেজিস্টর হিসাবে ব্যবহার করা যায়। রিহোস্ট্যাটগুলি উচ্চ কারেন্ট সরবরাহ করতে পারে বলে সাধারণতঃ উচ্চ কারেন্ট সার্কিটে ইহা বেশী ব্যবহার হয়। অন্যান্য রেজিস্টরের তুলনায় রিহোস্ট্যোটে টলারেন্স ফ্রি রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। ইহা ৫ ওয়াট হতে ১০০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার রেটিং এ পাওয়া যায়। এর রেজিস্ট্যান্স কয়েক ওহম হতে কয়েক কিলো ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি কার্যকর অবস্থায় বেশ গরম হয়ে থাকে।

৩। ফিল্ম-টাইপ রেজিস্টর:

ফিল্ম টাইপ রেজিস্টর দুই ধরণের হয়ে থাকে। ১) কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর এবং ২) মেটাল ফিল্ম রেজিস্টর। উভয় প্রকার রেজিস্টরের গঠন প্রায় একই রকম। কার্বন ফিল্ম রেজিস্টরে একটি সিরামিক দন্ডের উপর হাইড্রো-কার্বন যৌগ অথবা অন্য কার্বন যৌগের পাতলা ফিল্ম বা প্রলেপ তৈরী করা হয়। পরে উক্ত প্রলেপকে মেশিনের সাহায্যে এমন ভাবে কাটা হয় যেন দন্ডের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত স্পাইরাল আকৃতির একটি পরিবাহী পথ সৃষ্টি হয় যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। কার্বন ফিল্ম নির্মিত এই পরিবাহী পথটি রেজিস্টরের কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। এবার কার্বন ফিল্মের দুই প্রান্ত হতে মেটাল ক্যাপ বিশিষ্ট লম্বা টার্মিনাল সংযোগ করা হয় এবং কার্বন ফিল্মসহ সিরামিক রডটি ইনসুলেটিং কভার দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়। কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।

এই ধরনের রেজিস্টরের কার্যকরী রেজিস্ট্যান্স কার্বন যৌগের কার্বন ও অন্য উপাদানের অনুপাতের উপর নির্ভর করে। এই ধরনের রেজিস্টরের মান কার্বন কম্পোজিশনের তুলনায় বেশী একুরেসি বিশিষ্ট হয় এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনে রেজিস্ট্যান্স খুব বেশী পরিবর্তন হয় না ফলে তা গুণগত মানে উত্তম। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরের গঠন কার্বন ফিল্ম রেজিস্টরের মতই তবে এক্ষেত্রে কার্যকরী উপাদান হিসাবে কার্বন ব্যবহার না করে মেটাল ব্যবহার করা হয়। রেজিস্ট্যান্সের মান মেটালের আপেক্ষিক রোধ, ফিল্মের প্রসস্ততা ও দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরগুলি খুবই কম টলারেন্স বিশিষ্ট হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এদের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হয়না বললেই চলে। একারনে মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরগুলি কার্বন কম্পোজিশন ও কার্বন ফিল্মের তুলনায় গুণগত মানে খুবই উত্তম। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে। কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।

৪। সারফেস মাউন্ট রেজিস্টর:

এই রেজিস্টরকে অনেকে চীপ রেজিস্টর বলে থাকে। এই প্রকার রেজিস্টরে একটি সিরামিক বেজের উপর মোটা কার্বন কম্পোজিশনের ফিল্ম/স্তর সৃষ্টি করা হয় এবং স্তরটি কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। কার্বন কম্পোজিশনের কার্বন ও ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের অনুপাতের উপর এর মান নির্ভর করে। কার্বন ফিল্মের সাথে ইনার ইলেকট্রোড যোগ করা হয় এবং ইনার ইলেকট্রোডের সাথে বহিস্থ টার্মিনাল সংযোগ করা হয়, এই টার্মিনালের সাথেই সোল্ডারিং করা হয়। কার্বন ফিল্মকে একটি প্লাস্টিক অথবা কাঁচের কভার দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়।

এই রেজিস্টরগুলি আকৃতিতে খুব ছোট এবং ইহা মাদার বোর্ড সহ বিভিন্ন সুক্ষাতি সুক্ষ ইলেকট্রনিক সার্কিটে বেশী ব্যবহার হয়। এই রেজিস্টরগুলি বোর্ডের তলে স্থাপন করে উভয় পাশের টার্মিনালকে মাদার বোর্ডের কপার ট্রেসের সাথে সোল্ডারিং করে লাগানো হয়, এজন্য এদের সারফেস মাউন্ট বলা হয়। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক কিলোওহম পর্যন্ত হয় এবং এদের পাওয়ার রেটিং সাধারণতঃ ১/৪ থেকে ১/৮ ওয়াটের মধ্যে হয়ে থাকে। এর গায়ে বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে মান লিখা থাকে।

চিত্রে আঙ্গুলের সাথে তুলনা করে এর আকার বোঝানো হয়েছে। এরা সাধারণতঃ ০.১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা এবং ০.০৬৩ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রসস্ত হয়ে থাকে। এরা খুব টেম্পারেচার স্ট্যাবল এবং আর্দ্রতা প্রতিরোধক বলে বেশী আর্দ্রতায় রেজিস্ট্যান্স স্থির থাকে।

৫। ফিউজ্যাবল রেজিস্টর:

এগুলি বিশেষ ধরণের ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর যা একই সাথে রেজিস্টর এবং ফিউজ হিসাবে কাজ করে। যখন কারেন্ট প্রবাহ রেজিস্টরের পাওয়ার সীমা অতিক্রম করে তখন এটি পুড়ে সার্কিটকে ওপেন করে ফেলে।

৬। আলোক সংবেদনশীল রেজিস্টর (LDR)

ইহাকে Photo Resistor, Photo conductor বলা হয়ে থাকে। ইহাতে কার্যকরী উপাদান হিসাবে সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়াল যেমনঃ ক্যাডমিয়াম সালফাইড (CdS) ব্যবহার করা হয়। যখন ক্যাডমিয়াম সালফাইড এর উপর ফোটন আপতিত হয় তখন এর ইলেকট্রনগুলি শক্তি গ্রহণ করে কন্ডাকশন ব্যান্ডে চলে এসে পরিবাহীতা বৃদ্ধি করে ফলে রেজিস্ট্যান্স কমে যায়। এভাবে আলোকের ইপস্থিতিতে অথবা আলোকের তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর রেজিস্ট্যান্স হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। আলোক বাড়লে রেজিস্ট্যান্স কমে এবং আলোক তীব্রতা কমলে রেজিস্ট্যান্স বাড়ে। রোবোটিকস টেকনোলজিতে বেশী ব্যবহার হয় এছাড়া লাইট সেন্সর হিসাবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহার হয়।

৭। তাপ সংবেদনশীল রেজিস্টর (Thermistor)

ইহাকে কখনো কখনো রেজিস্ট্যান্স টেমপারেচার ডিটেকটর বলা হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে থার্মিস্টরের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হয়।

৮। পটেনশিওমিটার:

পটেনশিওমিটার একটি তিন টার্মিনাল বিশিষ্ট ভেরিয়েবল রেজিস্টর। নিচে একটি পনেশিওমিটারের চিত্র দেয়া হয়েছে। এর ১ এবং ৩ নং টার্মিনালের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থির মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। ১ অথবা ৩ নং এর সাথে ২ নং টার্মিনালটি ব্যবহার করে শ্যাফটটি ঘুরালে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর পাওয়া যায়।

এর আভ্যন্তরীণ গঠন নিচে দেখানো হয়েছে। এর অভ্যন্তরে একটি বৃত্তাকার এবানাইট পাতের উপর গ্রাফাইটের স্তর তৈরী করা হয় এই স্তরটি মূলতা কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। এর উপর দিয়ে একটি মেটাল স্লাইড কন্টাক্ট শ্যাফটের সাহায্যে ঘুরতে পারে। ফলে যে কোন এক প্রান্তের সাথে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়।

এগুলি কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম হতে পারে। এগুলি খুব বেশী কারেন্ট প্রবাহ করতে পারেনা বলে রিহোস্ট্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয়না এগুলিকে পটেনশিওমিটার হিসাবে বেশী ব্যবহার করা হয়।

পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাটের মধ্যে পার্থক্য কী?

পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট উভয়েই ভেরিয়েবল রেজিস্টর এবং উভয়ের তিনটি করে টার্মিনাল আছে। কিন্তু কিছু ব্যবহারিক পার্থক্য আছে। যেমন:

পটেনশিওমিটারের স্থির টার্মিনালদ্বয় সিগনাল সোর্সের সাথে প্যরালালে সংযোগ করে পরিবর্তনশীল টার্মিনাল হতে আউটপুট নেয়া হয়। এক্ষেত্রে লোডে ভোল্টেজ সরবরাহ হয়। অর্থাত পটেনশিওমিটার ভোল্টেজকে পরিবর্তন করে। এ কারনে এই ডভাইসের নাম পটেনশিওমিটার। পক্ষান্তরে রিহোস্ট্যাটে স্থির টার্মিনালদ্বয় ব্যবহার না করে একটি স্থির ও একটি পরিবর্তনশীল মোট দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করা হয় এবং এতে লোডে পরিবর্তনশীল কারেন্ট সরবরাহ হয়। একারনে এই ডিভাইসকে রিহোস্ট্যাট বলা হয়। ওয়্যার উন্ড ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলি বেশী কারেন্ট প্রবাহে সক্ষম বলে এদের রিহোস্ট্যাট হিসাবে বেশী ব্যবহার করা হয়। আর ফিল্ম ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলি কম কারেন্ট প্রবাহ করতে পারে বলে এদেরকে পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মোটকথা এই যে সংযোগ প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলিকে কখনো রিহোস্ট্যাট এবং কখনো পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

রেজিস্টরের পাওয়ার রেটিং কী?

যখন কোন রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ ঘটে তখন রেজিস্টরে তাপ আকারে কিছু পাওয়ার অপচয় হয় এবং রেজিস্টরটি গরম হয়। উৎপন্ন তাপমাত্রা প্রবাহিত কারেন্টের উপর নির্ভর করে। কারেন্ট বেশী হলে উৎপন্ন তাপ বেশী হয় এবং কম হলে তাপ কম হয় এমনকি বেশী তাপমাত্রার কারনে রেজিস্টরটি পুড়ে যেতে পারে। সর্বোচ্চ যে পরিমান কারেন্ট প্রবাহ করলে অথবা যে পরিমান পাওয়ার অপচয় হলে একটি রেজিস্টর পূর্ণ দক্ষতার সাথে দীর্ঘ দিন কাজ করতে পারে তাকে ঐ রেজিস্টরের পাওয়ার রেটিং বলে একে ওয়াট এককে প্রকাশ করা হয়। যেমন একটি ১ ওয়াট রেটিং এর ১০০ ওহম রেজিস্টর বলতে যা বুঝায় তা গাণিতিক ভাবে বুঝার চেষ্ট করি।

P=I2R1=I2.100I=1100I=110=0.1 Amp     Here, P=1W, R=100Ω, I=?

অর্থাত একটি ১ ওয়াট রেটিং এর ১০০ ওহম রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ০.১ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহ করলে তা নিরাপদ থাকবে এর বেশী কারেন্ট প্রবাহ করলে রেজিস্টরটি পুড়ে যাবে।

রেজিস্টরের মান প্রকাশের পদ্ধতি:

রেজিস্টরের মান প্রকাশ করা বা লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরগুলিতে এর গায়ে ওহমিক মান ও পাওয়ার রেটিং লিখে প্রকাশ করা হয়। ছোট আকৃতির রেজিস্টর যেমন- কার্বন কম্পোজিশন, কার্বন ফিল্ম টাইপ, মেটাল ফিল্ম ইত্যাদিতে মান লিখার মত যথেষ্ট যায়গা থাকেনা বলে কালার কোডের মাধ্যমে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। চীপ রেজিস্টরে বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে মান প্রকাশ করা হয়। কালার কোড পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।

কালার কোড পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিতে মান সরাসরি না লিখে বিভিন্ন রঙীন কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই কালার কোডগুলির বিভিন্ন মান রয়েছে তা জেনে নিই।

দুই ধরনের কারার কোড পদ্ধতি রয়েছে, ৪ ব্যান্ড ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি। ৪ ব্যান্ডের তুলনায় ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে বেশী সুক্ষ মান প্রকাশ করা যায়। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ১ম ব্যান্ড প্রথম ডিজিট ২য় ব্যান্ড দ্বিতীয় ডিজিট এবং ৩য় ব্যান্ড গুণক রাশি এবং ৪র্থ ব্যান্ড টলারেন্স প্রকাশ করে। উপরের টেবিলের চিত্র দুটি লক্ষ করি।

উপরের চিত্রে প্রথম ব্যান্ড হলুদ দ্বিতীয় বেগুনী ৩য় ব্যানড লাল ফলে এর মান ৪৭০০ ওহম। চতুর্থ ব্যান্ড রুপালী অর্থাত এর মান ৪৭০০ ওহমের ১০% কম অথবা বেশী হতে পারে। দ্বিতীয় চিত্রে অনুরূপ ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।

টলারেন্স কী?

যখন রেজিস্টর কারখানায় তৈরী হয় তখন কারখানার যান্ত্রিক ত্রুটি এবং রেজিস্টভ উপাদানের মিশ্রনের তারতম্যের কারনে ১০০ ভাগ সঠিক মান পাওয়া যায়না বরং প্রকৃত মান হতে কিছুটা বিচ্যূতি ঘটে এই বিচ্যূতিকে টলারেন্স বলে।

চীপ রেজিস্টর কোডিং পদ্ধতি:

চীপ রেজিস্টর ৩ ডিজিট এবং ৪ ডিজিট কোডে মান প্রকাশ করে থাকে। নিচের উদাহরণ লক্ষ করুন-

অনুরূপ নিম্নলিখিত কোডসমূহের জন্য মানের হিসাবে দেখানো হলোঃ

220 = 22 × 10 0 = 22 Ω 471 = 47 × 10 1 = 470 Ω 102 = 10 × 10 2 = 1000 Ω 3 R 3 = 3.3 Ω

রেজিস্টরের সমবায়:

অনেক সময় কাংখিত মানের রেজিস্টর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়না বা প্রয়োজনীয় মানের রেজিস্টরটি স্ট্যান্ডার্ড মানের অন্তর্ভূক্ত থাকে না। তখন রেজিস্টর সমবায় করে ব্যবহার করতে হয়। শ্রেনী অথবা সমান্তরাল সমবায়ের মাধ্যমে কাংখিত মানটি তৈরী করা হয়। যেমন আপনার যদি ১.১ ওহমের রেজিস্টর প্রয়োজন হয় কিন্তু আপনার আছে ২.২ ওহমের রেজিস্টর তাহলে দুটি ২.২ ওহমের রেজিস্টর সমান্তরাল সমবায়ে ১.১ ওহমের রেজিস্টর তৈরী করতে পারেন।

সূত্র:

  1. Basic Elcetronics – Bernard Grob
  2. Wikipedia

পোস্টটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে।

ক্যাপাসিটর

ভূমিকা:

বরাবরের মতো আজ একটি বৈদ্যূতিক ডিভাইস নিয়ে আলোচনা করব। আজকের ডিভাইস ক্যাপাসিটর। সাধারণতঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রসঙ্গে লেখার ব্যপারে অধিক আগ্রহ প্রকাশ করি, আর তা যদি হয় ইলেকট্রনিক বিষয়ে তাহলে আগ্রহটা আরো বেড়ে যায়। এই পোষ্টটি থেকে তারাই বেশি উপকৃত হতে পারবে যারা ইলেকট্রনিক্সের নবীন শিক্ষার্থী এবং প্রজেক্ট তৈরীর নেশা রয়েছে। চেষ্টা করছি সব দিক বিবেচনা করে একটি পূর্ণঙ্গ তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট লিখবার, তবু শব্দ, বাক্য ও তথ্যের উপস্থাপনায় থাকবে কিছু অপূর্ণতা, কিছু ঘাটতি, সেটুকু না হয় আপনারা পূর্ণ করে দিবেন। পোস্টের আয়তন যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করার জন্য বর্ণনা শব্দবহুল না করে সংক্ষিপ্ত আকারের বিবৃতি উপস্থাপনে সচেষ্ট হলাম।

পরিচয়:

দুটি পরিবাহী প্লেটের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ (Dielectric) রেখে প্লেট দ্বয়কে পৃথক করলে যে ডিভাইস তৈরী হয় তাকে ক্যাপাসিটর বলে। ক্যাপাসিটর একটি বৈদ্যূতিক প্যসিভ ডিভাইস যা চার্জ সংরক্ষণ করতে পারে এজন্য অতীত দিনগুলিতে এই ডিভাইসকে ইলেকট্রিক্যাল কন্ডেনসার বলা হতো। বাংলা ভাষায় একে ধারক নামে অভিহিত করা হয়।

ক্যাপাসিটর ও ক্যাপাসিট্যান্স:

ক্যাপাসিটর হলো ডিভাইস বা সার্কিটের উপাদান এবং ক্যাপাসিট্যান্স হলো উক্ত ডিভাইসের বৈশিষ্ট বা গুণ, কোন ক্যাপাসিটরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থের চার্জ ধারণ করার সামর্থ্যকে ক্যাপাসিট্যান্স বলা হয়। যে ক্যাপাসিটরের চার্জ ধারণ ক্ষমতা বেশী তার ক্যাপাসিট্যান্স বেশী এবং চার্জ ধারণ ক্ষমতা কম হলে ক্যাপাসিট্যান্স কম।

প্রতীক:

বিভিন্ন ইলেকট্রনিক স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রামে ক্যাপাসিটরকে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন সিম্বল বা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। তা নিম্নে দেখানো হলোঃ

ক্যাপাসিটরপ্রতীক
স্থির মানের পোলার ক্যাপাসিটর
স্থির মানের নন পোলার ক্যাপাসিটর
পরিবর্তনশীল মানের ক্যাপাসিটর

দুটি সমান্তরাল প্লেটের দুই পার্শ্বে দুটি টার্মিনাল যোগ করে ক্যাপাসিটরকে প্রকাশ করা হয়। ক্যাপাসিটরটি পোলার হলে প্লেটের পার্শ্বে (+) অথবা (-) চিহ্ন ব্যবহার করে উক্ত প্লেটের পোলারিটি প্রকাশ করা হয় অথবা একটি প্লেটকে বাঁকা করে আঁকা হয়। বাঁকা প্লেটটি নেগেটিভ টার্মিনালকে প্রকাশ করে। ক্যাপাসিটরটি পরিবর্তনশীল মানের হলে প্লেটদ্বয়ের উপর একটি তীর চিহ্ন সম্বলিত রেখা একে তা প্রকাশ করা হয়।

একক:

বর্তমানে ক্যাপাসিট্যান্সের এসআই একক ফ্যারাড (Farad), একে ইংরেজী F অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফ্যারাড একটি বৃহৎ একক ফলে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মাইক্রোফ্যারাড μF এবং পিকোফ্যারাড pF রেঞ্জের একক ব্যবহার করা হয়। নিম্নে বহুল ব্যবহৃত একক গুলির মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হলোঃ

ফ্যারাডমাইক্রোফ্যারাডন্যানোফ্যারাডপিকোফ্যারাড
1F1000000μF1000000000nF1000000000000pF
\(1\times10^{-6}F\)1μF100nF1000000pF
\(1\times10^{-9}F\)0.001μF1nF1000pF
\(1\times10^{-12}F\)0.000001μF0.001nF1pF

১ ফ্যারাড বলতে কি বুঝায়?

কোন ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স ১ ফ্যারাড বলতে বুঝায় ঐ ক্যাপাসিটরের আড়াআড়িতে ১ ভোল্ট বিভব পার্থক্যের পরিবর্তনে উক্ত ক্যাপাসিটরে সঞ্চিত চার্জের পরিবর্তন ১ কুলম্ব হয়ে থাকে।

অর্থাৎ কোন চার্জ বিহীন ক্যাপাসিটরের আড়াআড়িতে ১ ভোল্ট বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলে ক্যাপাসিটরটি যদি ১ কুলম্ব চার্জ সংরক্ষণ করতে পারে তবে উক্ত ক্যাপাসিটরের ধারণক্ষমতাকে ১ ফ্যারাড বলা হয়।

অতীতে ক্যাপাসিট্যান্সের একক ছিল জার (Jar)। ১ জারের পরিমান ছিল ১ ন্যানোফ্যারাডের সমতুল্য। ১ জার = ১ ন্যানোফ্যারাড।

ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ:

সময়টা ১১ অক্টোবর ১৭৪৫ খ্রীস্টাব্দ। জার্মানের পোমেরানিয়া শহরের (Pomerania) আইনবিদ/জুরি, খ্রীষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ ও পদার্থবিদ ইয়াল্ড জর্জ ভন ক্লেইস্ট (Ewald Georg von Kleist) একটি বিশেষ ধরণের জার বা পাত্র (Jar) উদ্ভাবন করেন যা ক্লেইস্টিন জার নামে সুপরিচিত। ভন ক্লেইস্ট প্রত্যক্ষ করেন যে হাতে ধারণকৃতঃ পানিপূর্ণ কাঁচের জারে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক জেনারেটরের মাধ্যমে উচ্চ বিভব প্রয়োগ করে তাতে চার্জ সংরক্ষণ করা যায়। ক্লেইস্ট আরো প্রত্যক্ষ করেন যে জেনারেটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর কাঁচের জার সহ সংযোগকারী তারটি স্পর্শ করলে বৈদ্যূতিক শকের সৃষ্টি হয়। এই পরীক্ষা মাধ্যমে তিনি চার্জ সঞ্চয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

একই বছর ইউনিভার্সিটি অব লেইডেনের একজন ডাচ পদার্থবিদ (Dutch physicist Pieter van Musschenbroek) একই ধরণের একটি জার উদ্ভাবন করেন যা লেইডেন জার নামে পরিচিত। লেইডেন জার প্রাথমিক সময়ে শুধুমাত্র পরীক্ষাগারে এক্সপেরিমেন্ট করতে ব্যবহৃত হতো এবং পরে কিছু বেতার যন্ত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে।

ডেনিয়েল (Daniel Gralath) নামের একজন পোল্যান্ডের পদার্থবিদ সর্বপ্রথম এরূপ একাধিক জার সমবায় করতে সক্ষম হন যার মাধ্যমে উচ্চ ক্যাপাসিট্যান্স সৃষ্টি করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পদার্থবিদ রাজনীতিবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন লেইডেনের জারটি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে চার্জ সঞ্চিত হয় কাঁচের উপরিতলে মধ্যে পানিতে নয়, যদিও পূর্ববর্তী গবেষকদের ধারণা ছিল চার্জ সঞ্চিত হয় পানিতে। একারনে পরবর্তী যুগের লেইডেন জারগুলিতে পানির পরিবর্তে জারের ভেতর ও বাহিরে কন্ডাকটিভ কোটিং ব্যবহার করা হয়েছে। ১৭৮২ সালে বিজ্ঞানী ভোল্টা (Volta) লক্ষ করেন যে লেইডেন জারের মত ডিভাইসের মাধ্যমে অতি স্বল্প স্থানের মধ্যে অধিক চার্জ সঞ্চিত করা যায় এ কারনে তিনি এর নাম করন করেন কন্ডেনসার।

ফ্রাংকলিনের কিছু বছর পরেই ইংলিশ রসায়ণবিদ মাইকেল ফ্যারাডে তেলের ব্যারেল দ্বারা নির্মিত প্রথম ব্যবহারিক ক্যাপাসিটর উদ্ভাবন করেন এবং এর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন। ১৮৬১ সালে একজন ইংলিশ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ল্যাটিমার ক্লার্ক (Josiah Latimer Clark) ফ্যারাডের সম্মানার্থে ‘ফ্যারাড’ শব্দটিকে (Farad) ক্যাপাসিট্যান্সে একক হিসাবে প্রচলন করেন।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে যখন থেকে বেতার প্রযুক্তির উন্নয়ন শুরু হয় তখন উন্নত প্রযুক্তির চাহিদানুযায়ী কাঁচ নির্মিত ক্যাপাসিটরের পরিবর্তে মেটাল ফয়েল কন্ডাকটর নির্মিত ক্যাপাসিটরের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। এ সময় ১৮৮৬ সালে চার্লস পুলক (Charles Pollak) নামে একজন গবেষক এনোডাইজিং (Anodizing Technique) কৌশল বিষয়ে গবেষণা করার সময় সর্বপ্রথম ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরের মূলনীতি উদ্ভাবন করেন। তিনি লক্ষ করেন যে পাতলা এলুমিনিয়াম অক্সাইডের প্লেট ও ইলেকট্রোলাইট দ্রবণের মধ্যে উচ্চ মাত্রার ক্যাপাসিট্যান্স সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৯২৬-১৯৩১ সালের মধ্যে অস্ট্রো-হাংগেরিয়ান (Austria-Hungary) পদার্থবিদ জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফিল্ড (J. E. Lilienfeld) ইলেকট্রোইটিক ক্যাপাসিটরের উপর গবেষণা করে আধুনিক রূপের ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরের পেটেন্ট উদ্ভাবন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর সমূহের অনেক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আরো ত্রুটিমুক্ত এবং উন্নত করা হয়। বর্তমান যুগে বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীগুলি আধুনিক যুগর চাহিদা পূরণের নিমিত্ত নিজ নিজ গবেষণা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন দিন উন্নত যুগোপযোগী ক্যাপাসিটিভ ডিভাইস তৈরী করছে। বর্তমান বিশ্বে একটি বিখ্যাত ক্যাপাসিটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইলিনইজ ক্যাপাসিটর (Illinois Capacitor, inc)’ ১৯৩৫ সাল হতে তাদের গবেষণা দ্বারা যুগের চাহিদানুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্যাপাসিটর উৎপাদন করে চলেছে। তাদের উৎপাদিত ক্যাপাসিটরের উল্লেখযোগ্য বিবর্তন দেখানো হলোঃ

১৯৩৪-কোম্পানী প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইলিনয়েজ কন্ডেনসার কোম্পানী নামে। (Illinois Condenser Company)
১৯৩৫-সিকাগোতে প্রথম ফ্যাক্টরী স্থাপন।
১৯৪৮-ইচড্ ফয়েল প্রযুক্তিতে ক্যাপাসিটর উৎপাদন শুরু।
১৯৫০-শুষ্ক ইলেট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরের পেটেন্ট তৈরী।
১৯৬১-বহু টার্মিনাল বিশিষ্ট ক্যাপাসিটরের পেটেন্ট গ্রহন
১৯৬৩-ক্ষুদ্রাকৃতি ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরের পেটেন্ট তৈরী।
১৯৬৯-কোম্পানীটি তার নাম পরিবর্তন করে Illinois Capacitor, Inc. নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৯৭-সারফেস মাউন্ট ক্যাপাসিটর (চীপ ক্যাপাসিটর) তৈরী শুরু
২০০৬-পলিমার ক্যাপাসিটর তৈরী শুরু
২০০৭-সুপার ক্যাপাসিটর তৈরী শুরু
২০১১-MPP metalized polypropylene radial lead capacitors উৎপাদন।

প্রাচীন যুগের পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত কিছু লেইডেন জার:

মূলনীতি ও কার্যপ্রণালী:

ডাইইলেকট্রিক পদার্থগুলির আড়াআড়িতে ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ ঘটে না কিন্তু ক্যাপাসিটরের প্লেট চার্জ ধারণ করতে পারে।

[চিত্র-ক] তে একটি ব্যাটারীর সাথে ক্যাপাসিটর এবং সুইচ যুক্ত করে বর্তনী তৈরী করা হয়েছে। সুইচ ওপেন অবস্থায় ক্যাপাসিটরটি চার্জ বিহীন অবস্থায় থাকে। আমরা জানি, ব্যাটারী হচ্ছে ইলেকট্রোমটিভ ফোর্সের উৎস। যখন কোন ক্যাপাসিটরকে একটি ডিসি সরবরাহের সাথে যুক্ত করা হয় [চিত্র-খ] এর মত তখন ইলেকট্রোমটিভ ফোর্সের কারণে ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল হতে ইলেকট্রনসমূহ সংযোগ তারের মাধ্যমে ক্যাপাসিটরের B প্লেটে এসে জমা হয় এবং একই সময়ে সমপরিমান ইলেকট্রন A প্লেট হতে সংযোগ তারের মাধ্যমে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালের দিকে আকৃষ্ট হয়। ফলে ক্যাপাসিটরের B প্লেটে ইলেকট্রনের আধিক্য ও A প্লেটে প্রোটনের আধিক্য দেখা দেয়, কিন্তু কোন অবস্থাতেই ক্যাপাসিটরের ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ হয় না। এখানে B প্লেটে ইলেকট্রনের আধিক্যের কারনে স্থির নেগেটিভ চার্জ ও A প্লেটে ইলেকট্রনের ঘাটতির কারনে স্থির পজেটিভ চর্জের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা চলতে থাকে ততক্ষন যতক্ষণ না ক্যাপাসিটরের চার্জিত ভোল্টেজ সরবরাহ ভোল্টেজের সমান হয়। ব্যাটারী সংযুক্ত অবস্থায় এভাবে চার্জ সঞ্চিত হয়।

আমরা জানি বিতরীতধর্মী চার্জসমূহ পরস্পর আকর্ষিত হয়। ক্যাপাসিটরের A এবং B প্লেটে অবস্থিত বিপরীরধর্মী চার্জের ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ফিল্ডের মধ্যেও এই আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এই আকর্ষণ বলকে [চিত্র-খ] তীর চিহিৃত রেখা দ্বারা দেখানো হয়েছে যা ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই আকর্ষণ বল ইলেকট্রনসমূহকে প্লেটের সারফেসে আবদ্ধ থাকতে সাহায্য করে কিন্তু ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতে পারেনা কারন ডাইলেকট্রিক পদার্থ অপরিবাহী। এখন যদি ব্যাটারীকে ক্যাপাসিটর হতে বিচ্ছিন্ন করি [চিত্র-গ] এর মত তবুও চার্জসমূহ আর ব্যাটারীতে ফেরত যাবেনা। এই অবস্থাকে বলা হয় চার্জিত অবস্থা এবং এই অবস্থায় ক্যাপাসিটরের দুই প্রান্তে ব্যাটারী ভোল্টেজের সমান ভোল্টেজ পাওয়া যাবে। এখন একটি পরিবাহী তার দ্বারা ক্যাপাসিটরের টার্মিনাল দুটি শর্ট করলে সঞ্চিত চার্জগুলি তারের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে চার্জ নিঃশেষ হবে কারন পরিবাহী পথটি অধিক সুগামী।

যখন কোন ক্যাপাসিটরে এসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় তখন প্রথম হাফ সাইকেলে যে পোলারিটিতে চার্জ হয় দ্বিতীয় হাফ সাইকেলে তা সম্পূর্ণ ডিসচার্জ হয়ে পূনরায় বিপরীত পোলারিটিতে চার্জ হয়, এবং প্রতিবার চার্জ হওয়ার জন্য ক্যাপাসিটর চার্জিং কারেন্ট গ্রহন করে এবং ডিসচার্জ হওয়ার সময় ডিসচার্জিং কারেন্ট প্রদান করে। এভাবে চার্জিং ও ডিসচার্জিং প্রক্রিয়ায় একটি ক্যাপাসিটর এসি প্রবাহ ঘটিয়ে থাকে, কিন্তু কোন ক্রমেই ডাইইলেকট্রিকের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় না।

ক্যাপাসিট্যান্স কি কি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?

ডাইইলেকট্রিকের প্রয়োজন কি? হ্যাঁ প্রয়োজন আছে। ডাইইলেকট্রিক পদার্থসমূহ বৈদ্যূতিক বলরেখাসমূহের প্রবল্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। বলরেখাসমূহ বায়ু অপেক্ষা যে কোন কঠিন ডাইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজেই প্রবাহিত হতে পারে, কারন কঠিন ডাইইলেকট্রিকের ভেদন যোগ্যতা বায়ু অপেক্ষা বেশী। উচ্চ ভেদন যোগ্যতা সম্পন্ন ডাইইলেকট্রিক ব্যবহার করলে বলরেখার বাধা কম হবে প্রবল্য বেশী হবে। বলরেখার প্রাবল্য বেশী হলে দুই প্লেটে অবস্থিত চার্জের মধ্যে আকর্ষন বল বেশী হবে, আর আকর্ষণ বল বেশী হলে প্লেটে বেশী পরিমান চার্জ সঞ্চয় হবে বা ক্যাপাসিট্যান্স বেশী হবে।

আবার ক্যাপাসিটরের প্লেটের ক্ষেত্রফল বেশী হলে অধিক স্থান জুড়ে বলরেখা আবিষ্ট হয় এবং প্রবল্য বেশী হয় ফলে ক্যাপাসিট্যান্স বেশী হয় এবং ক্ষেত্রফল কম হলে ক্যাপাসিট্যান্স কম হয়। উপরোক্ত প্রভাবকগুলির উপর ভিত্তি করে নিম্নে সূত্র প্রতিপাদিত হয়েছে। ক্যাপাসিট্যান্সকে নিচের সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ঃ

C=rAd ......................... (১)

এখানে C = ক্যাপাসিট্যান্স, \(\in_r\) = ডাইলেকট্রিকের ভেদন যোগ্যতা, A = প্লেটের ক্ষেত্রফল, d = প্লেটদ্বয়ের দূরত্ব।

ক্যাপাসিটরের বাধা:

ক্যাপাসিটরের বাধাকে ইংরেজীতে ক্যাপাসিটিভ রিয়্যাকট্যান্স বলা হয় (Capacitive Reactance)। ক্যাপাসিটর রেজিস্টিভ উপাদান নয় তাই এর বাধাকে রেজিস্ট্যান্স বলা হয় না। ক্যাপাসিটিভ রিয়াকট্যান্সকে ওহম (ohm) এককে প্রকাশ করা হয়। ক্যাপাসিটর এসি প্রবাহকে এর কম্পাংক অনুযায়ী বাধা দেয় এবং ডিসি প্রবাহকে পুরোপুরি বাধা দেয়। ক্যাপাসিটরের বাধা নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় –

X C = 1 2 π fC ......................... (২)

এখানে, \(X_C\) = ক্যাপাসিটিভ রিয়াকট্যান্স বা ক্যাপাসিটরের বাধা, \(f\) = প্রযুক্ত ভোল্টেজের কম্পাংক, C = ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স।

এই সম্পর্ক হতে বুঝা যায় যে, প্রযুক্ত ভোল্টেজের কম্পাংক যত বেশী হবে ক্যাপাসিটরের বাধা তত কম হবে, কম্পাংক কম হলে বাধা বেশী হবে এবং কম্পাংক শূন্য অর্থাত ডিসি হলে বাধা হবে অসীম।

সঞ্চিত চার্জের পরিমান:

কোন ক্যাপাসিটরে সঞ্চিত চার্জের পরিমান দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন (১) প্রযুক্ত ভোল্টেজ এবং (২) ক্যাপাসিট্যান্স। এবং এই সঞ্চিত চার্জকে নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়-

Q = CV ......................... (৩)

এখানে Q = সঞ্চিত চার্জের পরিমান, C= ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স এবং V= ক্যাপাসিটরে প্রযুক্ত ভোল্টেজ। এই সম্পর্ক হতে সহজেই বুঝা যায়, একই মানের ক্যাপাসিটরের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ভোল্টেজ বাড়ালে সঞ্চিত চার্জের পরিমান বাড়বে এবং ভোল্টেজ কমালে চার্জের পরিমান কমবে। আরো বুঝা যায় প্রযুক্ত ভোল্টেজ স্থির রেখে ক্যাপাসিট্যান্স বাড়ালে চার্জের পরিমান বাড়বে এবং ক্যাপাসিট্যান্স কমালে চার্জও কমবে।

ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজ রেটিং কি?

একটি ক্যাপাসিটরে সর্বোচ্চ যে ডিসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা যায় তাকে ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজ রেটিং বলে। আমরা জানি ক্যাপাসিটরসমূহ ডাইইলেকট্রিক পদার্থ দ্বারা তৈরী। এই ডাইইলেকট্রিক পদার্থসমূহের আড়াআড়িতে প্রযুক্ত ভোল্টেজ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজে পৌছালে ডাইইলেকট্রিক তার ইনসুলেটিং ধর্ম হারিয়ে কারেন্ট প্রবাহ শুরু করে। অনুরূপ ক্যাপাসিটরে যথেচ্ছা অধিক ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে ডাইইলেকট্রিক শর্ট হয়ে ক্যাপাসিটর নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তাই ক্যাপাসিটরে একটি নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় যাতে ডাইইলেকট্রিকের কোন ক্ষতি হয় না এবং ক্যাপাসিটর অধিক দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই ভোল্টেজ মানকে ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজ রেটিং বলা হয়। ইহাকে ক্যাপাসিটরের গায়ে লেখা থাকে। ক্যাপাসিটরকে তার রেটেড ভোল্টেজের চেয়ে বেশী ভোল্ট প্রয়োগ করা যায় না কিন্তু কম ভোল্ট প্রয়োগ করলেও সঠিক ক্যাপাসিট্যান্স পাওয়া যায় ও সঠিক ভাবে কাজ করে। ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স ভোল্টেজ রেটিং এর উপর নির্ভর করেনা।

কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য:

  1. ক্যাপাসিটর এসি কারেন্টকে শর্ট করে এবং ডিসি কারেন্টকে ব্লক করে। অর্থাত ক্যাপাসিটরের মধ্য দিয়ে এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় কিন্তু ডিসি প্রবাহিত হয়না।
  2. ইহা বৈদ্যূতিক চার্জকে ধারণ করতে পারে।
  3. ইহা প্যাসিভ ডিভাইস অর্থাত এর গেইন সৃস্টির ক্ষমতা নেই।
  4. চার্জ সর্বদা ক্যাপাসিটরের প্লেটদ্বয়ে সঞ্চয় হয়।
  5. ক্যাপাসিটরের মধ্য দিয়ে চার্জিং এবং ডিসচার্জিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসি (AC) কারেন্ট প্রবাহিত হয়, কখনোই ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় না।

প্রকারভেদ:

মানের উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের:

  1. স্থির মানের ক্যাপাসিটর
  2. পরিবর্তনশীল মানের ক্যাপাসিটর

পোলারিটির উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের:

  1. পোলার ক্যাপাসিটর
  2. নন পোলার ক্যাপাসিটর

ব্যবহৃত উপাদানের উপর ভিত্তি করে কয়েক ধরনের হয়:

  1. ইলেকট্রোলাইটিক
  2. ডিস্ক সিরামিক
  3. মাইলার
  4. মাইকা
  5. পেপার ক্যাপাসিটর/মেটাল ফয়েল ক্যাপাসিটর
  6. সারফের মাউন্ট/চীপ ক্যাপাসিটর
  7. ট্যানটালাম ক্যাপাসিটর

সহজে বুঝার জন্য নিচের ছকটি লক্ষ করি-

ক্যাপাসিটর
স্থির মানেরপরিবর্তনশীল মানের
পোলারনন পোলারপোলারনন পোলার
ইলেকট্রোলাইটিকমাইকাএয়ার ক্যাপাসিটর
পেপার
সিরামিক
ট্যান্টালামমাইলার
সারফেস মাউন্ট

বিভিন্ন ক্যাপাসিটরের গঠন:

বিভিন্ন ক্যাপাসিটরের গঠন বিভিন্ন রকম। গঠন ভেদে এর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়। আসুন জানার চেষ্টা করি কোন ক্যাপাসিটরের আভ্যন্তরীণ গঠন কি রকম।

মাইকা ক্যাপাসিটর:

টিন ফয়েল প্লেটের মাঝখানে ডাইইলেকট্রিক হিসাবে পাতলা মাইকা শীট রেখে এই ধরনের ক্যাপাসিটর তৈরী করা হয়। এক সেট মেটাল ফয়েলকে সংযোগ করে একটি টার্মিনাল বের করা হয় এবং অন্য আরেক সেট মেটাল ফয়েলকে যুক্ত করে আরেকটি টার্মিনাল বের করা হয় যা চিত্রে দেখানো হয়েছে।

এরপর পুরো সিস্টেমটি একটি প্লাস্টিক কভারের মধ্যে স্থাপন করা হয়। মাইকা ক্যাপাসিটর সাধারণতঃ কম ক্যাপাসিট্যান্সে জন্য ১০ থেকে ৫০০ পিকোফ্যারাড রেঞ্জের জন্য তৈরী ও ব্যবহার করা হয়।

পেপার ক্যাপাসিটর:

এই ধরণের ক্যাপাসিটরে ডাইইলেকট্রিক হিসাবে কাগজ ব্যবহার করা হয়, এবং প্লেট হিসাবে টিন ফয়েল ব্যবহার হয়। কয়েক স্তর কাগজ ও টিনফয়েল পাশাপাশি রেখে প্যাঁচানো হয় এবং সিলিন্ডার আকৃতি কম্প্যাক্ট রোল সৃস্টি করা হয়, যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। টিন ফয়েলের সাথে ধাতব তার যুক্ত করে টার্মিনাল বের করা হয়।

পুরো সিস্টেমটি একটি প্লাস্টিক কন্টেইনারে ভর্তি করা হয় এবং গায়ে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। এই ধরনের ক্যাপাসিটরে মধ্যম মানের ক্যাপাসিট্যান্স পাওয়া যায় (প্রায় ০.০০১ থেকে ১.০ মাইক্রোফ্যারাড পর্যন্ত)।

সিরামিক ক্যাপাসিটর:

[চিত্র খ] তে আভ্যন্তরীন গঠন দেখানো হয়েছে এবং [চিত্র ক] তে বাহ্যিক রূপ দেখানো হয়েছে। এই ধরনের ক্যাপাসিটরে পোড়া মাটি অথবা টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড অথবা কিছু কিছু সিলিকেট যৌগ ডাইইলেকট্রিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ক্যাপাসিটরের ধাতব প্লেট হিসাবে সাধারণতঃ সিলভার ব্যবহার করা হয়।

সিলভার ডিস্কের সাথে ধাতব টার্মিনাল যুক্ত করে সংযোগ বের করা হয়। প্লেট ও ডাইইলেকট্রিককে অপরিবাহী আবরণে ঢেকে দেয়া হয়। এই ধরণের ক্যাপাসিটর হতে নিম্ন মানের ক্যাপাসিট্যান্স সাধারণতঃ ১ পিকোফ্যারাড হতে ১ মাইক্রোফ্যারাড পর্যন্ত ক্যাপাসিট্যান্স পাওয়া যায়।

সারফেস মাউন্ট ক্যাপাসিটর:

এই ধরণের ক্যাপাসিটরকে অনেকে চীপ ক্যাপাসিটর বলে থাকে। এগুলি সাধারণতঃ কম্পিউটার মাদার বোর্ড সহ সূক্ষ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার হয়। এদেরকে মাদারবোর্ডের সারফেসে কপার ট্রেসের সাথে সোল্ডারিং করে লাগানো হয়। চীপ রেজিস্টরের মত দেখতে চীপ ক্যাপাসিটরও আকারে প্রায় ০.১২৫ ইঞ্চি লম্বা এবং ০.০৬৩ ইঞ্চি প্রস্থ হয়ে থাকে।

চীপ ক্যাপাসিটরের অভ্যন্তরে মাল্টিলেয়ার কন্ডাকটিভ ফিল্ম ক্যাপাসিটরের প্লেট হিসাবে কাজ করে এবং প্লেটের ফাঁকে ফাঁকে সিরামিক পদার্থ ডাইইলেকট্রিক হিসাবে কাজ করে। এভাবে ক্যাপাসিটর গঠিত হয়। কিছু সংখ্যক কন্ডাকটিভ ফিল্ম হতে যুক্ত হয়ে কোন এক পাশের টার্মিনালের সাথে যুক্ত হয় এবং বাকী কন্ডাকটিভ ফিল্মগুলি একত্রে যুক্ত হয়ে অপর পাশের টার্মিনালের সাথে যুক্ত হয়। চীপ ক্যাপাসিটরগুলি সাধারণতঃ কয়েক পিকোফ্যারাড হতে কয়েক মাইক্রোফ্যারাড পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটর:

এই ধরণের ক্যাপাসিটরগুলিতে এক সেট স্থির ধাতব প্লেট থাকে যাদের স্টেটর বলা হয় এবং এক সেট মুভেবল ধাতব প্লেট থাকে যাদের রোটর প্লেট বলা হয়। এই রোটর প্লেটসমূহকে শ্যাফটের মাধ্যমে ঘুরানো যায়। যখন শ্যাফট ঘুরানো হয় তখন রোটর প্লেটসমূহ স্টেটর প্লেটসমূহের ফাঁকে ফাঁকে প্রবেশ করে এবং মাঝখানের বায়ু ডাইইলেকট্রিক হিসাবে কাজ করে, কিন্তু প্লেটগুলি পরস্পর স্পর্শ করে না। ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স নির্ভর করে রোটর প্লেট ও স্টেটর প্লেটের উপরিপাতিত ক্ষেত্রফলের উপর। শ্যাফট ঘুরালে রোটর প্লেট ও স্টেটর প্লেটের মধ্যে উপরিপাতিত ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয় বলে ক্যাপাসিটরটি পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিট্যান্স তৈরী করে।

এই ধরণের ক্যাপাসিটরের ক্যপাসিট্যান্স খুব কম হয়। রেডিও রিসিভারের (Gang) টিউনিং ক্যাপাসিটর এই ধরণের ক্যাপাসিটরের উত্তম উদাহরণ।

ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর:

ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরগুলিতে সাধারণতঃ স্বল্প স্থানে অধিক ক্যাপাসিট্যান্স তৈরী হয়। এর অভ্যন্তরে ব্যবহৃত ইলেকট্রোলাইটিক অধিক ক্যাপাসিট্যান্স সৃষ্টিতে সহায়ক। এই ধরণের ক্যাপাসিটরে এলুমিনিয়াম মেটাল ফয়েল ও পাতলা ফিল্ম ডাইইলেকট্রিক পরস্পর প্যাঁচিয়ে সিলিন্ডার আকৃতির রোল তৈরী করা হয়। পরে উক্ত রোলটি বোরাক্স ইলেকট্রোলাইটিকপূর্ণ এলুমিনিয়াম পাত্রে ভর্তি করা হয় এবং পাতলা মেটাল ফয়েল হতে দুটি টার্মিনাল বের করা

এই ধরণের ক্যাপাসিটরে পোলার ক্যাপাসিট্যান্স তৈরী হয় অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরে ধণাত্বক ও ঋণাত্বক টার্মিনাল রয়েছে। সাধারণতঃ একটি নতুন ক্যাপাসিটরের লম্বা টার্মিনালটি ধণাত্বক টার্মিনাল হিসাবে কাজ করে। যদি ক্যাপাসিটরের উভয় টার্মিনাল সমান লম্বা হয় তাহলে এর গায়ে চিহ্নিত নেগেটিভ মার্কিং (যা চিত্রে দেখানে হয়েছে) দেখে নেগেটিভ টার্মিনাল চেনা যায়। নেগেটিভ চিহ্নিত পার্শ্ব হতে যে টার্মিনালটি খুব কাছে সেটিই হল নেগেটিভ টার্মিনাল। উল্লেখ্য যে ইলেকট্রোলাইটক ক্যাপাসিটর যে কোন সার্কিটে ব্যবহারের সময় সঠিক পোলারিটিতে লাগাতে হয় নতুবা ক্যাপাসিটর বিষ্ফোরণ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ট্যান্টালাম ক্যাপাসিটর:

এই ক্যাপাসিটরটি বিশেষ ধরণের ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর যাতে এলুমিনিয়ামের (Al) পরিবর্তে ট্যানটালাম (Ta) এবং টাইটেনিয়াম (Ti) ধাতু ব্যবহার হয়। এই ক্যাপাসিটরগুলি দীর্ঘজীবি হয় এবং লিকেজ কারেন্ট খুব কম থাকে, সাইজে ছোট কিন্তু অধিক ক্যাপাসিট্যান্স তৈরী হয়।

ফিল্ম ক্যাপাসিটর:

ফিল্ম ক্যাপাসিটরের গঠন অনেকটা পেপার ক্যাপাসিটরের মত তবে এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক হিসেবে কাগজের পরিবর্তে (পলিপ্রোপাইলিন) প্লাস্টিক ফিল্ম ব্যবহার হয়। অনেকে একে মাইলার ক্যাপাসিটরও বলে থাকে। দুই ধরণের ফিল্ম ক্যাপাসিটর রয়েছে যেমনঃ ফয়েল টাইপ এবং মেটালাইজড টাইপ। ফয়েল টাইপ ক্যাপাসিটরে কন্ডাকটিভ প্লেট হিসাবে এলুমিনিয়াম অথবা টিনের মেটাল ফয়েল শীট ব্যবহার হয়। মেটালাইজড টাইপে প্লাস্টিক ফিল্মের উপর কন্ডাকটিভ প্লেট হিসাবে জিংক অথবা এলুমিনিয়ামের পাতলা স্তর সৃষ্টি করা হয়। কন্ডাকটিভ প্লেট সহ ফিল্ম পরস্পর জড়ানো থাকে। এর পর কন্ডাকটিভ প্লেট হতে টার্মিনাল বের করা হয় এবং ফিল্ম সহ প্লেটকে ইনসুলেটর কোটিং দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়।

এরা খুবই টেম্পারেচার স্ট্যাবল এবং এই ধরনের ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স ১০০ পিকোফ্যারাড হতে ১০০ মাইক্রোফ্যারাড পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মান লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি:

ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরের মান সাধারণতঃ ক্যাপাসিটরের গায়ে মাইক্রোফ্যারাড কিংবা পিকোফ্যারাড রেঞ্জে লিখা থাকে। মাইলার এবং ডিস্ক সিরামিক ক্যাপাসিটরের মান ক্যাপাসিটরের গায়ে সরাসরি মাইক্রোফ্যারাড কিংবা পিকোফ্যারাড রেঞ্জে না লিখে কোডিং পদ্ধতিতে লিখা হয়। ইলেকট্রনিক ইন্ডাসট্রিজ এলিয়েন্স কর্তৃক নির্ধারিত এই কোডিং পদ্ধতি নিচে দেয়া হলোঃ

মাইলার ক্যাপাসিটরের কোড:

গুণকটলারেন্স
সংখ্যাগুণকের মানবর্ণ/অক্ষর10 pF এর নিচে10 pF এর উপরে
0
1
1
10
B
C
±0.1 pF
±0.25 pF
-
2
3
100
1000
D
F
±0.5pF
±1.0pF
±1%
4
5
10000
100000
G
H
±2.0pF±2%
±3%
40.01J
K
-±5%
±10%
90.1M-±20%

নিচের উদাহরণ চিত্রটি লক্ষ করি:

উদাহরণঃ কোড \(122 K=12\times100=1200\) pF এর টলারেন্স K = ±10%

সিরামিক ক্যাপাসিটরের কোডঃ:

নিচে একটি নমূনা সিরামিক ক্যাপাসিটর দেখানো হয়েছে এবং কোড পরিচিতি দেখানো হয়েছে। কোডগুলির পরিচয় জেনে নিন-

ক্যাপাসিট্যান্সের মান নির্ধারণী টেবিল:

গুণকটলারেন্স
সংখ্যাগুণকের মানবর্ণ/অক্ষর10 pF এর নিচে10 pF এর উপরে
0
1
1
10
B
C
±0.1 pF
±0.25 pF
-
2
3
100
1000
D
F
±0.5pF
±1.0pF
±1%
4
5
10000
100000
G
H
±2.0pF±2%
±3%
40.01J
K
-±5%
±10%
90.1M-±20%

উদাহরণঃ 104J = 10 \(\times\) 10000 = 100000 pF টলারেন্স = ±5%

স্ট্যান্ডার্ড মানসমূহ:

ইলেকট্রনিক ইন্ডাসট্রিজ এলিয়েন্স (Electronic Industries Alliance, EIA) যা ১৯৯৭ সালের পূর্বে ইলেকট্রনিক ইন্ডাসট্রিজ এসোসিয়েশন (Electronic Industries Association) নামে পরিচিত ছিল। ইহা আমেরিকায় অবস্থিত ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি ট্রেড এসোসিয়েশন যা বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক পণ্যের বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারন ও গুনগত মান যাচাই করে। EIA কর্তৃক নির্ধারিত ক্যাপাসিটরের স্ট্যান্ডার্ড মান ও কোডসমূহ নিম্নরূপ যা সর্বদা বাজারে পাওয়া যায়।

EIA Capacitance Code:

EIA CodeμFpFnFEIA CodeμFpFnF
0R50.530030
1R0133033
1R21.236036
1R51.539039
1R81.843043
2R02.047047
2R22.251051
2R72.756056
3R03.062062
3R33.368068
3R93.975075
4R04.082082
4R74.791091
5R05.0101100
5R65.6111110
6R06.0121120
6R86.8131130
7R07.0151150
8R08.0161160
8R28.2181180
9R09.0201200
10010221220
11011241240
12012271270
13013301300
15015331330
16016361360
18018391390
20020431430
22022471470
24024511510
27027561560
6216201040.1100000100
6816801240.12120000120
7517501540.15150000150
8218201840.18180000180
9119102240.22220000220
1020.001100014740.47100000470
1120.001111001.1105110000001000
1220.001212001.26820.0068306.8
1320.001313001.38220.0082308.2
1520.001515001.51030.013010
1620.001616001.61530.0153015
1820.001818001.81830.0183018
2020.002200022230.0223022
2220.002222002.22730.0273027
2420.002424002.43330.0333033
2720.002727002.73930.0393039
3320.003333003.34730.0473047
3920.003939003.95630.0563056
4720.004747004.76830.0683068
5620.005656005.6----

সমবায়:

অনেক সময় বাজারে কাংখিত মানের ক্যাপাসিটর পাওয়া যায় না। তখন একাধিক ক্যাপাসিটর সমবায়ের মাধ্যমে কাংখিত মান তৈরী করে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ দুটি ১০ মাইক্রোফ্যারাড ক্যাপাসিটর শ্রেনী সমবায়ের মাধ্যমে ৫ মাইক্রোফ্যারাড সৃষ্টি করা যায়। আবার ২ টি ১০ মাইক্রোফ্যরাড ক্যাপাসিটর সমান্তরাল সমবায়ের মাধ্যমে ২০ মাইক্রোফ্যারাড সৃষ্টি করা যায়। সমবায়ের মান নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ঃ

সমান্তরাল সমবায়ের ক্ষেত্রে:

C eq = C 1 + C 2 + C 3 + ...............   + C n

শ্রেনী সমবায়ের ক্ষেত্রে:

1 C eq = 1 C 1 + 1 C 2 + 1 C 3 + ...............   + 1 C n

ত্রুটিপূর্ণ ক্যাপাসিটর যাচাইকরণ:

একটি ক্যাপাসিটর বিভিন্নভাবে ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। যেমন ডাইইলেকট্রিক পদার্থ শর্ট থাকা কিংবা ওপেন থাকা, ক্যাপাসিটরটি রেটেড মানের চেয়ে কম বা বেশী হওয়া। যাই হোক ডাইলেকট্রিক পদার্থের শর্ট এবং ওপেন অবস্থাকে একটি এনালগ AVO মিটারের সাহায্যে নির্নয় সুবিধাজনক, আর ক্যাপাসিটরটি সঠিক মানে আছে কি-না তা ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সাহায্যে নির্নয় সুবিধাজনক।

এনালগ AVO মিটারটি ওহমিক রেঞ্জে নির্বাচন করতে হবে। উচ্চ ক্যাপাসিট্যান্সের ক্ষেত্রে মিটারকে লোয়ার রেজিস্ট্যান্স স্কেলে (১০ কিলো ওহম হতে ১ মেগাওহম) নির্বাচন করতে হবে এবং নিম্ন ক্যাপাসিটেন্সের ক্ষেত্রে মিটারকে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স স্কেলে (১ মেগা ওহম হতে ১০০ মেগা ওহম) নির্ধারণ করতে হবে। এরপর মিটারের প্রোব দুটি ক্যাপাসিটরের দুই প্রান্তের সাথে যুক্ত করলে মিটারের কাটাটি খুব দ্রুত নিম্ন রেজিস্ট্যান্স অঞ্চলে বিক্ষেপিত হবে এর পর ধীরে ধীরে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স অঞ্চলের দিকে ফিরে আসেতে থাকবে এবং এক সময় অসীম রেজিস্ট্যান্সের কাছাকাছি চলে আসবে। এটাই হলো ভালো ক্যাপাসিটরের বৈশিষ্ট, তবে যদি কাটাটি না নেমে কোথাও দাড়িয়ে যায় বা স্থির রেজিস্ট্যান্স দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ক্যাপাসিটরের ডাইইলেকট্রিক পদার্থটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যদি মিটারের কাটাটি কখনোই বিক্ষেপিত না হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্যাপাসিটরটি ওপেন রয়েছে। উল্লেখ্য যে ক্যাপসিটরটি পরীক্ষার পূর্বে অবশ্যই সম্পূর্ণ ডিসচার্জ করে নিতে হবে।

অনেক সময় বাতাসের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার কারনে অথবা দীর্ঘ দিন ব্যবহারের ফলে ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স পরিবর্তন হতে পারে বা ক্যাপাসিটরের গায়ে লেখা মান হতে বিচ্যূত হতে পারে। তাই ক্যাপাসিটর ব্যবহারের পূর্বে এর মান পরিমাপ করে নেয়া ভাল। ক্যাপাসিট্যান্স পরিমাপের জন্য আধুনিক ডিজিটাল মাল্টিমিটারগুলিতে সুবিধা দেয়া থাকে। ডিজিটাল মাল্টমিটারের সিলেক্টর নবটি ক্যাপাসিট্যান্স স্কেলে রেখে ক্যাপাসিটরকে প্রোব দুটির সাথে যোগ করলেই মিটারে মান প্রদর্শিত হয়।

ব্যবহার:

  1. পাওয়ার স্টেশনে পাওয়ার ফ্যাকটর কারেকশনে ব্যবহৃত হয়
  2. যে কোন ইলেকট্রনিক সার্কিটে ট্রানজিয়েন্ট ফেনোমেনা প্রতিরোধে
  3. পালসেটিং ডিসিকে ফিল্টারিং করে রিপল কমানের জন্য ব্যবহৃত হয়
  4. হাই-পাস, লো-পাস ফিল্টার ইত্যাদি সার্কিটে
  5. ক্লাম্পার সার্কিটে
  6. RC কাপলিং সার্কিটে
  7. টাইম ডিলে সার্কিটে ব্যবহার করা যায়
  8. বেতার যন্ত্রের টিউন্ড সার্কিটে (LC Tank circuit)
  9. সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরে (বাড়ীতে ব্যবহৃত সিলিং ফ্যান) দুই কয়েলের মধ্যে ফেজ ডিফারেন্স সৃষ্টিতে।

পিসিবিতে সংযোজনের পদ্ধতি:

অধিকাংশ প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডে ক্যাপাসিটরকে প্রকাশ করার জন্য নিম্নের চিহৃসমূহ ব্যবহার হয়:

[চিত্র-ক] তে একটি গোলাকার বৃত্তের মধ্যে + ও – চিহ্নিত প্রতীকের + ছিদ্রে ক্যাপাসিটরের ধণাত্বক টার্মিনাল এবং – ছিদ্রে ক্যাপাসিটরের ঋণাত্বক টার্মিনাল সংযোজন করা হয়। [চিত্র-খ] তে বাকা প্লেট চিহ্নিত টার্মিনালটি ঋণাত্বক টার্মিনাল হিসাবে উপস্থাপিত, এই টর্মিনালের সাথে সংযুক্ত ছিদ্রে ঋণাত্বক টার্মিনাল সংযোগ করা হয়। [চিত্র-গ] দ্বারা নন পোলার ক্যাপাসিটর বুঝায় তাই সংযোগের সময় পোলারিটি বিবেচনার প্রয়োজন নেই। [চিত্র-ঘ] তে সাদা রং করা অংশে অবস্থিত ছিদ্রটি ঋণাত্বক টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত, এই ছিদ্রে ক্যাপাসিটরের ঋণাত্বক টার্মিনাল সংযোগ করতে হয়।

সতর্কতা:

  1. অনেক সময় ক্যাপাসিটর ত্রটিপূর্ণ থাকে যেমন আভ্যন্তরীন ইলেকট্রোডগুলি শর্ট থাকে কিংবা ওপেন থাকে তাই সার্কটে সংযোজনের পূর্বে ক্যাপাসিটরগুলি অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
  2. ক্যাপাসিটর পরীক্ষার সময় মিটারের দুই প্রোব দুই হাত দিয়ে ধরা যাবে না শুধু ক্যাপাসিটরের টার্মিনাল দুটিতে মিটারের প্রোব সংযোগ করতে হবে, নতুবা মানব শরীরের ক্যাপাসিট্যান্স যোগ হয়ে ভুল মান আসতে পারে।
  3. সার্কিটে সংযুক্ত ক্যাপাসিটর পরিমাপের সময় যে কোন এক টার্মিনাল খুলে পরিমাপ করতে হবে, নতুবা সার্কিটে সংযুক্ত অন্যান্য উপাদান পাঠের অন্তর্ভূক্ত হয়ে ভুল মান প্রদর্শিত হতে পারে।
  4. পাওয়ার সাপ্লাই ফিল্টারিং করার ক্ষেত্রে অথবা যে কোন পিসিবিতে পোলার ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর সংযোগের সময় সর্বদা সঠিক পোলারিটিতে লাগাতে হয় নতুবা ভয়ংকর বিষ্ফোরনের মাধ্যমে বিপদজনক ঘটনা ঘটতে পারে।

সূত্র:

  1. Basic Electronics – Bernard Grob
  2. Wikipedia

***এই পোস্টটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে

---------

আইপিএস তৈরীর প্রচেষ্টা

ভূমিকা:

আসছে গরমের দিন, বৈদ্যূতিক লোডশেডিং হবে নিত্যসঙ্গী। এমন সময় স্কুল কলেজ খোলা থাকবে কিন্তু রাতে বিদ্যূৎ সরবরাহ না থাকার কারণে যথারীতি স্কুলের পড়া হবেনা। অসুবিধা!! এই অসুবিধা দুর করতে আপনারা বাজার থেকে কিনে থাকেন আইপিএস নামক যন্ত্র, যার মাধ্যমে ব্যাটারীতে সঞ্চিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৈদ্যূতিক বাতি, পাখা চালানো হয়। লোডশেডিংয়ের অসুবিধা কিছুটা হলেও দুর হয়। আজ আপনাদের জন্য এমন একটি যন্ত্রের কার্যনীতি ব্যাখ্যা করবো যাতে আপনারা আইপিএস কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারেন। আমি বলছিনা এই পোষ্টটি পড়লে আপনারা সবাই আইপিএস বানানো শিখে ফেলবেন, না তা কখনোই নয়। তবে হ্যাঁ এই যন্ত্রটির ভেতরের মূল কার্যনীতি বুঝতে পারবেন এতটুকু আশা করি, আর যারা ইলেকট্রনিক্স বিষয়ের ছাত্র এবং প্রজেক্ট তৈরী করার অভ্যাস আছে এরকম সৃজনশীল মেধার অধিকারী হলে তৈরী করে ফেলতে পারেন সন্দেহ নেই। এই পোষ্টটি থেকে ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষার্থীরা বেশী উপকৃত হতে পারবেন।

পরিচয়:

IPS এর অর্থ Instant Power Supply, অর্থাত এটি এমন একটি ইলেকট্রনিক বৈদ্যূতিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে লোডে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জরুরী বিদ্যূত সরবরাহ করা যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যাটারীতে সঞ্চিত ডিসি শক্তিকে এসি প্রবাহে রূপান্তর করে বৈদ্যূতিক লোড যেমন বাতি, পাখা ইত্যাদি চালানো যায়। যখন বিদ্যূৎ সরবরাহ থাকে তখন চার্জারের মাধ্যমে ব্যাটারীকে চার্জ করে বিদ্যূৎ শক্তি সঞ্চয় করা হয় আর যখন বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তখন উপযুক্ত যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ব্যাটারী হতে সঞ্চিত শক্তিকে প্রয়োজনীয় রূপে পরিবর্তন করে বৈদ্যূতিক লোড চালনা করা হয়। এই যন্ত্রের নাম আইপিএস। তো এবার প্রোজেক্টের উদ্দেশ্য জেনে নিই।

উদ্যেশ্য:

  1. লজিক ফ্যামিলি সম্পর্কে জানা
  2. ট্রান্সফর্মারের একটি ব্যবহার শেখা
  3. ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিষ্টরের ব্যবহার শেখা
  4. চার্জার সার্কিট সম্পর্কে জানা
  5. ইনভার্টারের কার্যপ্রণালী ও সর্বোপরি আইপিএসের কৌশল জানা

মূলনীতি:

আইপিএসের মূলনীতি হলো নিম্ন বিভব পার্থক্যের ডিসি ভোল্টেজকে উচ্চ বিভব পার্থক্যের এসি ভোল্টেজের রূপান্তর করা। এই কাজটি একটি বৈদ্যূতিক ইনভার্টারের সাহায্যে করা হয়, অর্থাত ইনভার্টারের কার্যপ্রণালী বুঝলে আইপিএসের কার্যপ্রণালী বুঝা যাবে।

বুঝার সুবিধার জন্য এই কার্যনীতিকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করেছি, (১) ব্যাটারী চার্জার অংশ (২) সঞ্চিত শক্তি অংশ (৩) মাল্টিভাইব্রেটর অংশ (৪) ট্রান্সফর্মার ড্রাইভার অংশ (৫) ষ্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার অংশ। এবার আসুন প্রত্যেক ব্লকের কার্যপদ্ধতি বুঝি।

(১) ব্যাটারী চার্জার অংশঃ এই অংশে বাসার ২২০ ভোল্ট বিদ্যূৎ সরবরাহ লাইন হতে একটি চার্জার সার্কিটের মাধ্যমে ব্যাটারীকে চার্জ করা হয়।

(২) সঞ্চিত শক্তি অংশঃ এই অংশের উপাদান হলো একটি ব্যাটারী যার মাধ্যমে শক্তিকে সঞ্চয় করা হবে।

(৩) মাল্টিভাইব্রেটর অংশঃ এই অংশে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির স্কয়ার ওয়েভ জেনারেট হবে যার সাহায্যে আমরা ট্রান্সফর্মারকে ড্রাইভ করবো। উল্লেখ্য যে, এই মাল্টিভাইব্রেটর অংশে উৎপন্ন ফ্রিকুন্সির মাধ্যমে আইপিএসের আউটপুট ফ্রেকুয়েন্সি নির্ধারণ হবে।

(৪) ট্রান্সফর্মার ড্রাইভার অংশঃ মাল্টিভাইব্রেটর অংশে উৎপন্ন সিগনাল দ্বারা ট্রান্সফর্মারকে ড্রাইভ করা যাবেনা কারণ ট্রান্সফর্মারকে ড্রাইভ করার জন্য যে পরিমান কারেন্ট দরকার মাল্টিভাইব্রেটরের আউটপুটে তার চেয়ে অনেক কম পরিমান কারেন্ট পাওয়া যায়। এই অংশে দুটি মসফেটের মাধ্যমে উচ্চ কারেন্ট সোর্স সৃষ্টি করা হয় যা মাল্টিভাইব্রেটর সিগনালের সাপেক্ষে সরাসরি ব্যাটারী হতে কারেন্ট নিয়ে ট্রান্সফর্মারকে ড্রাইভ করে।

(৫) ট্রান্সফর্মার অংশঃ এই অংশের মূল উপাদান একটি ষ্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার যা নিম্ন ভোল্টেজের এসি পাওয়ার গ্রহণ করে উচ্চ ভোল্টেজের এসি পাওয়ার সরবরাহ করবে। ট্রান্সফর্মারের আউটপুটকে সরাসরি লোডে সরবরাহ করা হবে।

স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রাম:

আলোচ্য প্রজেক্টের স্ক্যমিটিক ডায়াগ্রাম নিম্নে দেয়া হলো। বুঝার সুবিধার্থে ডায়াগ্রামটিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে দেখানো হলো। লাল রঙের ডটেড লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ আয়তক্ষেত্র দ্বারা একেটি সেকশন বা অংশকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং উক্ত অংশের মধ্যে অংশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্কিটের কার্যপ্রণালী:

ইনপুট প্লাগের মাধ্যমে চার্জার সার্কিটে এসি ২২০ ভোল্ট প্রয়োগ করা হয়। চার্জার অংশে একটি ছোট ষ্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার (২২০/১২-০-১২) এবং দুটি ডায়োডের মাধ্যমে চিত্রের মত সংযোগ করে একটি চার্জার সর্কিট তৈরী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সঞ্চিত শক্তি অংশের ব্যাটারীকে চার্জ করা হয়। সুইচের মাধ্যমে ইনভার্টার সার্কিটকে চালু ও বন্ধ করা হয়। আইসি ৭৮১০ এর মাধ্যমে স্থির মানের ১০ ভোল্ট মাল্টিভাইব্রেটর আইসিতে সরবরাহ করা হয়। উল্লেখ্য যে এখানে ৭৮১০ এর পরিবর্তে ৭৮১২ ব্যবহার করা যাবে।

মাল্টিভাইব্রেটর অংশে মাল্টিভাইব্রেটর আইসি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে IC1 CD4047 যা একটি CMOS লজিক ফ্যামিলিভুক্ত এষ্টেবল/মনোষ্টেবল মাল্টিভাইব্রেটর আইসি। এর দুটি আউটপুট রয়েছে Q এবং Q¯ তে যে আউটপুট পাওয়া যায় Q¯ এ তার বিপরীত আউটপুট পাওয়া যায় অর্থাৎ Q = 1 হলে Q¯=0 হবে। একে এমন ভাবে সংযোগ করা হয়েছে যাতে এষ্টেবল মাল্টিভাইব্রেটর হিসাবে এর Q এবং Q¯ আউটপুটে নিরবিচ্ছন্ন ভাবে পরস্পর বিপরীত ষ্টেটে ৫০ হার্জের স্কয়ার ওয়েভ তৈরী হয়। এই সিগনাল দ্বারা মসফেটসমূহকে ট্রীগার করা হবে। মাল্টিভাইব্রেটরের Q এবং Q¯ আউটপুটে কত ফ্রেকুয়েন্সি পাওয়া যাবে তা নির্ভর নির্ধারণ করা হবে নিচের সূত্রের মাধ্যমে-

f=18.8RC

এখানে R হলো ২ ও ৩ নং পিনের মধ্যে স্থাপিত পটেনশিওমিটারের রোধের মান এবং C হলো ১ ও ৩ নং পিনের মধ্যে ক্যাপাসিটরের মান। আলোচ্য সার্কিটে আমরা ক্যাপাসিটরের মান নির্ধারণ করেছি 0.01 µF তাহলে পটেনশিওমিটারের মান কত হলে ৫০ হার্জ উৎপন্ন হবে আসুন হিসাব করি।

এখানে, C = 0.01µF = 0.00000001F এবং f = 50 হার্জ, তাহলে,

f= 1 8.8 RC
=1 8.8 × 50 × 0 . 00000001
= 1 4.4 × 10 6 Ω
= 227k Ω

অর্থাৎ পটেনশিওমিটারের মান ২২৭ কিলোওহমে সেট করতে পারলে আমরা আইপিএসের আউটপুটে ৫০ হার্জের স্কয়ার ওয়েভ পাব। মাল্টিভাইব্রেটরের Q এবং Q̅ আউটপুট হতে ১০০ ওহম রেজিস্টরের মাধ্যমে ২টি মসফেটের গেটে ট্রিগারিং পালস প্রদান করা হয়েছে যা দ্বারা মসফেটসমূহ ব্যাটারী হতে পাওয়ার নিয়ে ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করবে।

ট্রান্সফর্মার ড্রাইভার অংশে রয়েছে দুটি মসফেট IRF3205 যা ট্রান্সফর্মারকে ড্রাইভ করবে। মাল্টিভাইব্রেটরের দুটি আউটপুট পরস্পর বিপরীত ধর্মী একটি 1 হলে অপরটি 0 এবং ইহা পরিবর্তনশীল সুতরাং একটি মসফেট যখন কন্ডাকশনে থাকবে তখন অপরটি অফ থাকবে এদের কন্ডিশন প্রতি সাইকেলেই পরিবর্তন হবে। প্রথম মসফেট ট্রান্সফর্মারের মধ্যে দিয়ে যে কোন একটি নির্দিষ্ট দিকে কারেন্ট প্রবাহ করবে, একই সময় দ্বিতীয় মসফেটটি অফ থাকবে আবার দ্বিতীয় মসফেটটি অন হয়ে ব্যাটারী হতে কারেন্টকে প্রথম মসফেটের বিপরীত দিকে ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে প্রবাহ করবে এ সময় প্রথম মসফেটটি অফ থাকবে। ফলে ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে স্কয়ার ওয়েভ এসি প্রবাহ হবে এবং ট্রান্সফর্মারটি স্টেপ আপ হবার কারনে প্রযুক্ত ১২ ভোল্ট ‌এসি সেকেন্ডারীতে ২৬০ ভোল্ট এসিতে রূপান্তর হবে।

ট্রান্সফর্মার সম্পর্কে কিছু কথা:

এই প্রজেক্টে দুটি ট্রান্সফর্মার আছে একটি চার্জার অংশে T1 এবং আরেকটি আইপিএসের আউটপুট অংশে T2। চার্জারের ট্রান্সফর্মারটি বাজার হতে সাধারণ ২২০/১২-০-১২ ভোল্টের ট্রান্সফর্মার কিনে নিলেই চলবে, কিন্তু T2 আউটপুট ট্রান্সফর্মারটি বাজার হতে সাধারণ ট্রান্সফর্মার কিনে নিলে চলবে না। এটি বিশেষ বৈশিষ্টযুক্ত, কিভাবে তৈরী করতে হবে তা উল্লেখ করা হলো। এই ট্রান্সফর্মারটি তৈরী করতে হলে প্রাইমারীতে (20SWG) ২০ সুপার ওয়্যার গেজ ইনসুলেটেড কেবল দ্বারা ২৫ টি প্যাচ দিয়ে উক্ত স্থান হতে সেন্টার ট্যাপ বের করতে হবে, এবং সেন্টার হতেই পুনরায় ২৫ টি প্যাচ দিয়ে শেষ টার্মিনালটি বের করতে হবে। তাহলে প্রাইমারী তৈরী হলো। সেকেন্ডারীতে কত প্যাচ দিতে হবে তা নির্নয় করি। ধরি সেকেন্ডারীতে আমরা ২৮৫ ভোল্ট চাই। তাহলে,

আমরা জানি,

N P N S = E P E S
25 N S = 12 285
N S = 25 × 285 12 = 593 600

তাহলে সেকেন্ডারীতে ৫৯৩ বা প্রায় ৬০০ টি প্যাঁচ দিতে হবে। এবং এজন্য প্রাইমারীর তুলনায় কিছুটা চিকন অর্থাৎ (22SWG) ২২ সুপার ওয়্যার গেজের তার ব্যবহার করতে পারেন। ট্রান্সফর্মারে তার প্যাচানোর জন্য হস্ত চালিত রোটেটিং মেশিনের সাহায্য নিন, শুধু হাত দিয়ে তার প্যাঁচাবেন না এতে করে তার আঁকা বাঁকা হয়ে জড়াবে এবং দক্ষতা হমে যাবে। আর কোর হিসাবে কাঁচা লোহার ৩ ইঞ্চি সাইজের আয়রন শীট ২ ইঞ্চি পুরু করতে যতগুলি দরকার হয় তা লাগাতে পারেন।

আমরা জানি গৃহস্থলীর বৈদ্যূতিক সামগ্রী ২২০ হতে ২৫০ ভোল্টের মধ্যে চলে তাহলে কেন সেকেন্ডারীতে ২৮৫ ভোল্ট চাই? এর কারণ লোডিং ইফেক্ট। নো লোড অবস্থায় যে ভোল্টেজ সেকেন্ডারীতে থাকবে তা লোড চাপানোর ফলে কমে আসবে। এবং তা সাইন ওয়েভের তুলনায় স্কয়ার ওয়েভের ক্ষেত্রে বেশী কমবে। তাই কিছু ভোল্টেজ বেশী ধরা হয়েছে। যাতে ভোল্টেজ কমলেও ২৫০ ভোল্টের কাছাকাছি থাকে। এরূপ একটি ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে 80VA পর্যন্ত লোড চালানো যাবে। এর চেয়ে বেশী লোড চালাতে হলে ট্রান্সফর্মারটি তার আরো মোটা ব্যবহার করতে হবে, কোর আরো বড় করতে হবে। যত বেশী লোড তত বড় ট্রান্সফর্মার।

ব্যাটারী সম্পর্কে কিছু কথা:

বলি। ব্যাটারীর AH বলতে কি বুঝায়? AH হলো এম্পিয়ার ও আওয়ারের গুনফল। 6 AH বলতে বুঝায় উক্ত ব্যাটারী ৬ এম্পিয়ার কারেন্ট ১ ঘন্টা ধরে সরবরাহ করে সব চার্জ নিঃশেষ হবে অথবা ১ এম্পিয়ার কারেন্ট ৬ ঘন্টা ধরে সরবরাহ করে সব চার্জ নিঃশেষ হবে অথবা ৩ এম্পিয়ার কারেন্ট ২ ঘন্টা ধরে সরবরাহ করে সব চার্জ নিঃশেষ হবে এরকম। 10 AH বিশিষ্ট একটি পূর্ণ চার্জিত ব্যাটারীর সাহায্যে ৪০ ওয়াটের ২টি টিউব লাইট বিরতিহীন ২ ঘন্টা চালানো যাবে, ১টি লাইট ৪ ঘন্টা চালানো যাবে, ২০ ওয়াটের ১টি লাইট ৮ ঘন্টা চালানো যাবে। অর্থাৎ যত বেশী AH তত বেশী সময় ব্যকআপ। আপনার চাহিদানুযায়ী বেছে নিন আপনার ব্যাটারী।

পুরো সার্কিটটি তৈরী হলে ব্যাটারী সহ সার্কিটটি একটি কাঠের অথবা ধাতব কন্টেইনারে ভরে সংরক্ষন করুন এতে বৈদ্যূতিক শকের সম্ভবনা থাকবে না।

ইলেকট্রনিক ব্যালাষ্ট সুবিধাজনক:

ইনভার্টারের সাহয্যে টিউব লাইট জালানোর জন্য ইলেকট্রনিক ব্যালাষ্ট ব্যবহার সুবিধাজনক দুটি কারনেঃ (১) চোক কয়েলের মাধ্যমে টিউবকে স্টার্ট করতে প্রথমে ষ্টার্টিং কারেন্ট বেশী প্রয়োজন হয় যা ইনর্ভার্টার হতে নাও পাওয়া যেতে পারে। (২) স্কয়ার ওয়েভ আউটপুটের ক্ষেত্রে চোক কয়েলে লস বেশী হবে ফলে ইলেকট্রনিক ব্যালাষ্ট ব্যবহার সুবিধাজনক।

সেমিকন্ডাকটর কম্পোনেন্টসমূহের প্রয়োজনীয় ডাটা:

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদীর তালিকা:

ক্রমিকপার্টের নামপরিমান
১।AC 2 পিন প্লাগ০১ টি
২।সেন্টার ট্যাপ ষ্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার 220/12-0-12০১ টি
৩।ডায়োড 4007 ০২ টি
৪।ব্যাটারী 12 ভোল্ট 7 থেকে 9 AH০১ টি
৫।সুইচ০১ টি
৬।IC2 7810 অথবা 7812০১ টি
৭।IC1 CD4047০১ টি
৮।মসফেট IRF3205০২ টি
৯।সেন্টার ট্যাপ ষ্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার (12-0-12)/250০১ টি
১০।রেজিষ্টর 100 ওহম, পটেনশিওমিটার 300 কিঃওহম০৩ টি
১১।সংযোগকারী ফ্লেক্সিবল তার৫ গজ
১২।সোল্ডার, রজনপঃমঃ
১৩।ক্যাপাসিটর 0.01µF বা EIA Code 103০১ টি
১৪।কন্টেইনার বাক্স০১ টি

আইপিএসটির বৈদ্যূতিক বৈশিষ্ট:

  1. এটি ৮০ ভিএ ক্ষমতার হবে।
  2. ২ টি ৪০ ওয়াট টিউব একত্রে জালানো যাবে।
  3. আউটপুট স্কয়ার ওয়েভ হবে পিওর সাইন ওয়েভ হবে না।
  4. এটি ইউপিএসের মত বিদ্যূৎ চলে গেলে অটো অন অফ হবেনা ম্যানুয়ালী অন অফ করতে হবে।

সাবধানতা:

  1. আইপিএস চালু অবস্থায় T2 ট্রান্সফর্মারের সেকেন্ডারীতে কখনোই হাত দিবেন না।
  2. ব্যাটারীকে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
  3. অনভিজ্ঞরা তৈরীর চেষ্টা করবেন না।
  4. মাঝে মাঝে ব্যাটারী চেক করুন ব্যাটারীর পানির লেভেল নিচে নেমে গেলে ডিসট্রিল্ড ওয়াটার দ্বারা পূর্ণ করে দিন।

সূত্র:

  1. বাস্তব অভিজ্ঞতা
  2. বিভিন্ন আর্টিকেল
  3. ইন্টারনেট

[*** পোস্টটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে]

---------